অকুস্থল: এই বাঁশঝাড় এবং সংলগ্ন পুকুরেই বিপদ সঙ্কেত।
বাড়ির পিছনে ক্রমেই জাঁকিয়ে বসছে পড়শির বাঁশঝাড়। কয়েক ফুটের মধ্যে রয়েছে কচুরিপানা আর শ্যাওলায় ভরা দু’টি পুকুর। সব মিলিয়ে বসতবাড়ির চৌহদ্দি কীটপতঙ্গ আর মশককুলের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।
নুয়ে পড়া বাঁশের বাড়বৃদ্ধিতে ঢাকতে বসেছে দোতলা বাড়ির ছাদ এবং সিঁড়ি। বারুইপুর পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কয়ালপাড়ার বাড়ির মালিক হরিশঙ্কর চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবার মশার আতঙ্কে রীতিমতো সিঁটিয়ে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবেশী কৃষ্ণচন্দ্র নস্করকে বারবার বাঁশঝাড় সরাতে বা তা কাটতে বলা হলেও তিনি কোনও আমল দেননি। শেষে সমাধান সূত্র খুঁজতে বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ-সহ প্রশাসনের একাধিক দফতরে হরিশঙ্করবাবু চিঠিও লিখেছেন। স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখে পুরসভাকে ব্যবস্থা নিতে বললেও কাজ এগোয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর এলাকায় মশার সমস্যার কথা মেনে নিলেও বিষয়টিকে দু’টি পরিবারের বিবাদ ছাড়া আর কিছু ভাবতে নারাজ।
সম্প্রতি এ নিয়ে ফের বচসায় জড়িয়ে পড়ে দু’টি পরিবার। হরিশঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশে ‘হত্যার চেষ্টা’র অভিযোগ করেন কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। তার ভিত্তিতে হরিশঙ্করবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে তেমন প্রমাণ না মেলায় সে দিনই আদালত থেকে জামিন পান তিনি। মশা তাড়ানো নিয়ে সরব হয়ে এ ভাবে হেনস্থা হতে হবে, তা ভাবতে পারছেন না হরিশঙ্করবাবু। ১৩ বছরের ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছরই এক প্রতিবেশী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। দীর্ঘ চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন তিনি। এই অবস্থায় বছরভর মশা আর পোকা মারার ওষুধ ছড়িয়েও নিশ্চিন্ত হতে পারি না।’’
ছাদের নাগালেই জঙ্গল, দেখাচ্ছেন হরিশঙ্করবাবু। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
কচুরিপানা ভরা পুকুর আর বাঁশঝাড় কি মশার আঁতুড়ঘর? জানতে চলতি মার্চে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’-এ তথ্যের অধিকার আইনে চিঠি লেখেন হরিশঙ্করবাবু। সংস্থা জানায়, ডেঙ্গি এবং চিকুনগুনিয়া রোগের মশা জন্মানোর আদর্শ জায়গা বাঁশগাছের কোটর, স্যাঁতসেতে পচা পাতা। এর পরেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় চিঠি লেখেন তিনি। গত জুনে স্বাস্থ্য দফতর সব দিক খতিয়ে দেখে পুরসভাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে। অভিযোগ, পুরসভা কিছুই করেনি। বরং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি লিখে শাসক দলের রোষে পড়তে হচ্ছে তাঁকে।
পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে কৃষ্ণচন্দ্র নস্কর বলেন, “জমিতে নিকাশি নালা করা নিয়ে বিবাদের জেরে উনি আমাকে মারধর করেছেন। অভিযোগ জানিয়েছি।” স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বিকাশ দত্ত বলেন, “মশার সমস্যা ওখানে আছে। তবে বিষয়টি দু’টি পরিবারের সীমানা সংক্রান্ত। আমরা কিছু করতে পারব না।” পুরসভার চেয়ারম্যান শক্তি রায়চৌধুরী বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের চিঠি পেয়েছি। বাঁশঝাড়ের যে অংশ নিয়ে সমস্যা, তা কাটতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে নির্দেশ দিয়েছি। পুকুরটিতে হরিশঙ্করবাবুর অংশ রয়েছে।ফলে ওই পুকুর পরিষ্কার রাখা নিয়ে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে।”