নজরদারি: স্পেশাল লোকালে ওঠার জন্য পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছে।
লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার প্ল্যাটফর্মগুলি ছিল ফাঁকা। প্ল্যাটফর্মে থাকা অস্থায়ী দোকানিদের দেখা গেল, দোকান বন্ধ করে মালপত্র বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দোকানে থাকা মালপত্র ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেন। কারণ, দ্রুত আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এই সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা। বরং করোনা পরিস্থিতি রোজই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
প্ল্যাটফর্মে হকারি করেন বিজয় পাল, কালাচাঁদ ঘোয। গত বছর করোনা এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে ট্রেন দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় রুজিরোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। কয়েক মাস আগে লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে রোজগার বাড়ছিল। যদিও ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা আগের তুলনায় কম হচ্ছিল।
বিজয়ের কথায়, ‘‘এত দিন ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম হচ্ছিল। রুজিরোজগার কমে গিয়েছিল। কোনও রকমে খেয়েপরে বেঁচে ছিলাম। এ বার কী ভাবে সংসার চলবে জানি না।’’ সরকারি নির্দেশ জানা ছিল না বলে বনগাঁ, হাবড়া স্টেশন চলে এসেছিলেন কয়েকজন যাত্রী।
ট্রেন বন্ধ শুনে বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি ফেরার আগে এক যুবক বললেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির কাজ করি। রোজ সকালে ট্রেনে কলকাতা যাই। কাজ করে বাড়ি ফিরি। কী ভাবে কাজে যাব জানি না। না খেয়ে মরতে হবে।’’
বনগাঁ থেকে কলকাতায় সড়ক পথে বাস পরিষেবা এখনও পর্যাপ্ত নয়। মহকুমার মানুষ ট্রেনের উপরেই নির্ভরশীল। বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে কলকাতায় যাওয়া বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
তা ছাড়া, গাড়িতে বনগাঁ থেকে কলকাতা যেতে সাড়ে তিন-চার ঘণ্টা লেগে যায়। অনেক মহিলা মিষ্টি ও ফুল কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে সংসার চালান। তাঁদেরও মাথায় হাত।
এ দিন থেকে অবশ্য স্টাফ স্পেশাল ট্রেন চলছে। তাতে বেশি যাত্রী দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজ্য জুড়ে লোকাল ট্রেন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ দিন সকাল থেকেই শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইন-সহ অন্যান্য লাইনেও বন্ধ লোকাল ট্রেন। তবে রেলের নিজস্ব কর্মীরা যাতে অফিসে যথা সময়ে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য দু’জোড়া ‘স্টাফ স্পেশাল’ ট্রেন চালানো হচ্ছে বেশিরভাগ লাইনে। সেই ট্রেনে যাতে অন্য কেউ না উঠে পড়েন, সে দিকে নজর রাখছে রেল পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে ৯টা ৫ মিনিটে স্টাফ স্পেশাল ট্রেন ক্যানিং স্টেশন থেকে শিয়ালদহের দিকে রওনা দেয়। উল্টো দিক থেকে সকাল ৮.৩০ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে অন্য একটি ট্রেন ক্যানিংয়ের দিকে রওনা দেয়।
একই ভাবে সন্ধ্যায় ৬.৩০ মিনিটে শিয়ালদহ থেকে ক্যানিংয়ের দিকে ও ক্যানিং থেকে ৮.১০ মিনিটে শিয়ালদহের দিকে আরও একজোড়া ট্রেন চলাচল করবে।
শুধুমাত্র রেলের কর্মীদেরকেই এই ট্রেনে যাতায়াতের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা