‘ম্যাডাম’কে ছাড়তে চান না বাদুড়িয়াবাসী

সাধারণ মানুষজন জানাচ্ছেন, কারও টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না শুনে এগিয়ে গিয়েছেন বিডিও। বাল্যবিবাহ রোধ করতে কর্মসূচি নিয়েছেন। নাবালিকাকে স্কুলমুখী করেছেন। মানুষের সুখে-দুঃখে মিলেমিশে গিয়েছিলেন সুপর্ণা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০১:৩১
Share:

নিরুপায়: জনতাকে শামাল দেওয়ার চেষ্টা বিডিও-র। ছবি: নির্মল বসু

বিডিও বদলির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এককাট্টা হলেন বাদুড়িয়ার মানুষ।

Advertisement

শুক্রবার রীতিমতো মাইক্রোফোন বেঁধে আন্দোলন শুরু করেন মানুষজন। বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাসকে কোনও ভাবেই যেতে দতে চান না তাঁরা। ভিড়ের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিস্থিতি সামাল দিতে বার বার দফতর থেকে বেরিয়ে এসেও জনতাকে শান্ত করতে ব্যর্থ হন সুপর্ণা। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশে বদলি হয়েছে। তা অমান্য করা কখনওই আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’

কিন্তু কে শোনে কার কথা। চোখের জল, কাকুতি-মিনতি দিয়ে শুরু হয়েছে যে কর্মসূচি, এক সময়ে তা-ই বিক্ষোভে পরিণত হয়।

Advertisement

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ন’মাস আগে বাদুড়িয়ার বিডিও হিসাবে দায়িত্ব নেন সুপর্ণা। এটুকু সময়েই এতটা ভরসা কী করে পেলেন মানুষের?

সাধারণ মানুষজন জানাচ্ছেন, কারও টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না শুনে এগিয়ে গিয়েছেন বিডিও। বাল্যবিবাহ রোধ করতে কর্মসূচি নিয়েছেন। নাবালিকাকে স্কুলমুখী করেছেন। মানুষের সুখে-দুঃখে মিলেমিশে গিয়েছিলেন সুপর্ণা। এ হেন ‘ম্যাডামের’ কোচবিহারে বদলির নির্দেশে তাই মানুষজন ক্ষুব্ধ।

এ দিন বিকেলে বাদুড়িয়ার চাতরা, চণ্ডীপুর, মলয়াপুর, সায়েস্তানগর, আড়বালিয়া, যদুরহাটি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো মানুষ আসেন বিডিওর দফতরে। বিডিওকে থেকে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। কাঁকড়াসুতি গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা খাতুনের কথায়, ‘‘ম্যাডাম না থাকলে তো এত দিনে আমার বিয়েই হয়ে যেত। আর পড়াশোনা করতে পারতাম না। অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে জানতে পেরে ম্যাডাম বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন।’’ এমনকী, বিয়ের আয়োজন করতে যে খরচ হয়েছিল, তা-ও তিনি দিয়ে দেন পরিবারটিকে।

ঈশ্বরীগাছা গ্রামের বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধা হালিমা বিবি বলেন, ‘‘কত বিডিও এল-গেল। কিন্তু বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা, কেউ ভাল করে কথা পর্যন্ত বলেননি এর আগে। অথচ ম্যাডাম শুধু ভাতার ব্যবস্থাই করে দেননি, চালও দিয়েছেন।’’

শায়েস্তানগরে মহিলাদের একটি প্রতিষ্ঠান সাহায্য না পেয়ে বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। এলাকাবাসীর বক্তব্য, ‘ম্যাডাম’ সংগঠনের মহিলাদের নিয়ে আলোচনায় বসে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ এবং কাজ শুরুর ব্যবস্থা করেন।

এ দিনের বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ওই সংগঠনের মহিলারা বলেন, ‘‘আগে আমাদের সমস্যার কথা কেউ শোনার ছিলেন না। অথচ ম্যাডাম আসার পরে তিনি সকলের সমস্যা মন দিয়ে শুনছেন। সমাধানেরও চেষ্টা করেন।’’

সন্ধের পরে দাবি আরও জোরাল হয় মানুষের। বাদুড়িয়া-বেড়াচাঁপা রাস্তা অবরোধ শুরু করে জনতা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরে সকলকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন