শ্যামনগরের একটি কারখানায়। — নিজস্ব চিত্র
মরচে ধরেছে লোহার যন্ত্রে। কোনও কারখানার দরজা খোলা থাকলেও উৎপাদনে ভাটা বহুদিন। কোথাও আবার উৎপাদনই নেই।
এই অন্ধকারের মধ্যেও আগাছা পরিষ্কার করে, গঙ্গাজল দিয়ে গোবর লেপে, ছোট্ট সামিয়ানার নীচে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে বিশ্বকর্মা পুজো সারলেন ধুঁকতে থাকা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। তাঁদের একটাই প্রার্থনা— সুদিন ফিরুক শিল্পাঞ্চলে।
এক সময় এই শিল্পাঞ্চলে কারখানা-মালিকেরা জাঁকজমকের সঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজো করতেন। কিছু ক্ষেত্রে তা দুর্গাপুজোর আয়োজনকেও ছাপিয়ে যেত। এখন সে সব ইতিহাস। অনেক কারখানাই বন্ধ। আনেকেই খরচের ভার সামলাতে না-পারয় পুজোর আয়োজন কমিয়ে এনেছেন। বন্ধ টিটাগড় পেপার মিলের ভাটপাড়া ইউনিটে এই পুজো কার্যত উৎসবের চেহারা নিত। শ্রমিক পরিবারদের সকলে আসতেন। খাওয়া, আড্ডা, নাটকে মেতে থাকতেন। এখন সেখানে শ্মশানের শূন্যতা। শ্যামনগর নিক্কো কোম্পানিও ঝাঁপ বন্ধ করার আগে পর্যন্ত বিশ্বকর্মা পুজোয় চোখধাঁধানো আতসবাজি পুড়িয়েছে। এ বার পুজো করছেন শ্রমিকেরাই। আশা একটাই, যদি কারখানা খোলে। যদি বকেয়া মেলে। এশিয়ার বৃহত্তম চটকল নৈহাটির হুকুমচাঁদেও বিশ্বকর্মা পুজো হয়েছে। হুকুমচাঁদের সিইও সমীরকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘পুজো না করলেই নয়। কিন্তু সেই উন্মাদনা কোথায়?’’
গঙ্গার ধারের নৈহাটির শিল্পতালুককে ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও বিশ্বকর্মা পুজোয় শিল্পাঞ্চলের কেন এই দৈন্য দশা? ভাটপাড়ার বিধায়ক তথা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল শ্রমিক নেতা অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘বাম আমলে এই শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আপ্রাণ চেষ্টা করছি এই শিল্পাঞ্চলকে ভরাডুবি থেকে বাঁচাতে। সময় লাগবে আরও।’’
নেই নেই করেও হাজার দু’য়েক কারখানা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। এর মধ্যে ২১টি চটকল রয়েছে। টিটাগড় ওয়াগনের মতো ভারী শিল্পও টিটাগড়ে ব্যবসা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। কারখানার পক্ষ থেকে সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শ্রমিক সমস্যা আছে। তার সঙ্গে রয়েছে বরাত পাওয়ার সমস্যাও। তবু আমরা টিকে থাকার লড়াই করছি। বিশ্বকর্মা পুজো হচ্ছে। কারণ এটা রীতি এবং অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।’’
কী বলছেন শ্রমিকেরা?
অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকই জানান, প্রত্যাশা পূরণের আশাতেই তাঁরা পুজোর আয়োজন করেছেন। কারখানাটা যেন চলে, সুদিন ফেরে— এটাই প্রত্যাশা। কিন্তু কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেলে ভবিষ্যতের সব স্বপ্নই যে নিভে যাবে!