গরম বাড়তেই জল-সঙ্কট বসিরহাটে

গরম বাড়তেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছে বসিরহাটে। সেই সুযোগ নিয়ে মাটির থেকে অবৈধ ভাবে জল তুলে বিক্রি হচ্ছে শহর জুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানীয় ও সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত জলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নোংরা। ফল ভুগছেন স্থানীয় মানুষ। আর্সেনিক দূষণ কবলিত বসিরহাট পুরসভার ২৩ ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকায় পানীয় জলের সংযোগ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:২০
Share:

জলের প্রতীক্ষায়। বসিরহাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গরম বাড়তেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের চাহিদা বাড়ছে বসিরহাটে। সেই সুযোগ নিয়ে মাটির থেকে অবৈধ ভাবে জল তুলে বিক্রি হচ্ছে শহর জুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানীয় ও সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত জলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নোংরা। ফল ভুগছেন স্থানীয় মানুষ।
আর্সেনিক দূষণ কবলিত বসিরহাট পুরসভার ২৩ ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকায় পানীয় জলের সংযোগ নেই। কোথাও কল থাকলেও জল বের হয় না। বিশুদ্ধ জল পেতে লম্বা লাইন দিতে হয়। হাতাহাতিও হয়। ত্রিমোহনী এলাকায় অবস্থিত পুরসভার মূল জলাধার থেকে যাওয়া জলের পাইপগুলি প্রায়ই ফেটে যায়। মিশে যায় নোংরা। স্থানীয় বাসিন্দা রতন পরামাণিক, সব্যসাচী চক্রবর্তী, মলিনা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘প্রযোজনীয় অনুমতি ছাড়াই শহরের মূল জলাধার থেকে অনেক বাড়ি ও কারখানায় জলের সংযোগ নেওয়া রয়েছে। তাই রাস্তার কলে জল আসে না। বাড়ির ব্যক্তিগত পাম্প চালালেও সমস্যা হয়।’’

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই জল চুরির ঘটনা ঘটছে। বসিরহাটের মহকুমা শাসক শেখর সেন অবশ্য বলেন, ‘‘আর্সেনিক মুক্ত জলের জন্য কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নদীর জলকে কী ভাবে শুদ্ধ করে পানীয়ের উপযোগী করা যায় সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের কয়েকটি জায়গায় আর্সেনিক দূষণের মাত্রা খুব বেশি। বেশ কয়েক বার রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা এই এলাকার মাটি পরীক্ষা করে সেই তথ্যই পেয়েছেন। পুরসভার এক কর্তা জানান, নলকোড়া এলাকার জলে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। বসিরহাট শহর সংলগ্ন সংগ্রামপুর, শিবহাটী-সহ কয়েকটি এলাকায় এর আগে আর্সেনিক দূষণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের বসিরহাট মহকুমার সহকারী বাস্তুকার জয়দেব মণ্ডল বলেন, ‘‘পুর এলাকার মধ্যে নলকোড়ার জলে বেশি আর্সেনিক মিলেছে। সমস্যা মেটানোর জন্য আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সেই কাজ প্রায় শেষের পথে।’’ তাঁর দাবি, বসিরহাটে ২৬টি বড় নলকূপের মাধ্যমে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর্সেনিক দূষণ নিয়ে সচেতনতা শিবিরও হয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ খুব বেশি হয়নি বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, আর্সেনিক মুক্ত জল পাওয়ার জন্য বাইরে থেকে জল কেনা ছাড়া উপায় নেই। পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য প্রশাসন থেকে লাগানো কলগুলির বেশির ভাগই অকেজো। গরম পড়তেই জলের চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু সেই অনুযায়ী যোগান মিলছে না। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন রক্ষিত, কাজল দাস, কল্পনা আচার্যের অভিযোগ, ‘‘নির্বাচন আসে নির্বাচন যায়। কিন্তু বসিরহাটে পানীয় জলের সমস্যা মেটে না।’’ প্রাক্তন শিক্ষক কালীদাস মজুমদারের দাবি, ‘‘দেখভালের অভাবে পানীয় জলের পাইপের মধ্যে নর্দমার নোংরা জল ঢুকে যায়। গরমের দিনে জল স্তর নেমে যাওয়ায় সমস্যা হয়। বাধ্য হয়ে জল কিনে খেতে হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেণির জল ব্যবসায়ীরা।’’

পানীয় জল সরবরাহ নিয়মিত নয়। তবে সামান্য বৃষ্টিতেই জল থইথই করে এই শহরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলাশয় বুজিয়ে যত্রতত্র আবাসন ও দোকান ঘর তৈরি হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সাঁইপালা, পশ্চিম দন্ডিরহাট, এস এন মজুমদার রোড, ভ্যাবলা, পুরাতন বাজার, দাস পাড়া, তপারচর, নলকোড়া, ধলতিথা, ট্যাঁটরা-সহ শহরের বেশির ভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যেটুকু বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ টিকে রয়েছে সেখানেও মিশে যায় নোংরা জল। স্থানীয় বাসিন্দা খগেন ভট্টাচার্য, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়দের দাবি, ‘শহরের মধ্যে দিয়ে ইছামতী নদী বয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ‘নিকাশি নালা পরিষ্কার হয় না। নিকাশি নালার জল কোথায় গিয়ে পড়বে তার সঠিক পরিকল্পনা নেই। অনেক সময় আমাদের নিজেদের উদ্যোগে নালা সাফাই করতে হয়।’’

সমস্যার কথা স্বীকার করে বসিরহাট পুরসভার সহকারি বাস্তুকার কাজল হালদার জানান, অধিকাংশ খাল দখল করে বাড়ি, দোকান ও ইটভাটা তৈরি হয়েছে। ফলে জল বের হতে সমস্যা হয়। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, বসিরহাট পুর এলাকায় ৬০০টি নলকূপ, ১২০০টি গভীর নলকূপ তৈরি করা হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এত কিছুর পরেও ছোট ছোট কারখনা করে অবৈধ পদ্ধতিতে তৈরি প্রায় কয়েক হাজার ব্যারেল পানীয় জল প্রতি দিন বসিরহাটের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি জেনেও চুপ করে রয়েছে প্রশাসনিক কর্তারা।

বসিরহাট পুরসভার নবনির্বাচিত পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘বসিরহাট হাসপাতাল চত্বরে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে একটি আর্সেনিক মুক্ত জলাধার তৈরি হচ্ছে। ওখান থেকে হাসপাতাল-সহ নলকোড়া, ধলতিথা ও দন্ডিরহাট এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন