West Bengal Lockdown

আসছে না কাঁচামাল, বন্ধ বিড়ি শ্রমিকদের রোজগার

কেমন আছে জেলার ছোট শিল্প এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা  শ্রমিক মালিকের জীবন। খোঁজ নিল আনন্দবাজারমহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের কঠুর, দুর্গাপুর, শ্বেতপুর, খিদিরপুর, স্বরূপনগর, হাসনাবাদ, বরুণহাট, শাকচুড়া, তালপুকুর, মাখালগাছা, বাদুড়িয়া, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ঘরে-ঘরে জীবিকা বলতে এই বিড়ি-শিল্পই।

Advertisement

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

Advertisement

বিড়ি বেঁধে কোনও রকমে এক বেলা আধপেটা খেয়ে দিন কাটছিল বিধবা লায়লা বিবির। মেয়ে রোজিনা ও মেয়ের দু’ছেলে আবদার ও ইসাকও থাকেন তাঁর সঙ্গে। মা-মেয়ে দু’জনেই বিড়ি শ্রমিক। দিন রাত এক করা পরিশ্রমে চলে তাঁদের সংসার।

কিন্তু করোনা-ঝড়ে এখন প্রায় উড়ে যেতে বসেছে তাঁদের গৃহস্থালি। বসিরহাটের রামনগর গ্রামের গুদামের পাশের বস্তিতে থাকেন বৃদ্ধা লায়লা। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেল দোকান-বাজার। কাজও বন্ধ। এখন শুধু ঘরে বসে থাকা। কোনও রোজগার নেই।’’ রামনগরের পাশের খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের মহিলারাও বিড়ি বেঁধেই সংসার চালান। লকডাউনে তাঁদেরও চোখে-মুখে হতাশা আর
অনিশ্চয়তার ছাপ।

Advertisement

মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের কঠুর, দুর্গাপুর, শ্বেতপুর, খিদিরপুর, স্বরূপনগর, হাসনাবাদ, বরুণহাট, শাকচুড়া, তালপুকুর, মাখালগাছা, বাদুড়িয়া, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ঘরে-ঘরে জীবিকা বলতে এই বিড়ি-শিল্পই। গ্রামের দরিদ্র মানুষের বেশির ভাগই বিড়ি তৈরির উপরেই নির্ভরশীল। অনেক ক্ষেত্রে পুরো পরিবারই বিড়ি তৈরি করে। হালিমা খাতুন, রুকসানা বিবিদের কথায়, ‘‘এত দিন বিড়ি বেঁধে কোনও রকমে বেঁচেছিলাম। করোনা এসে আমাদের কাজ কেড়ে নিয়েছে। হাট-বাজার, দোকান সব বন্ধ থাকায় বিড়ি বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। গাড়ি বন্ধ। বিড়ি তৈরির কাঁচামাল পাতা, তামাক, সুতো কিছু আসছে না। ফলে চাহিদামতো বিড়ি জোগান দিতে পারছি না।’’ তাঁরা আরও জানান, ঠিকঠাক বিড়ি পাচ্ছেন না বলে ব্যবসায়ীরাও এখন আর তাঁদের থেকে বিড়ি নিচ্ছেন না। হাতে টাকা আসছে না। দিনে কোনও রকমে একবার হাঁড়ি চড়ছে। ক’টা দিন পরে হয় তো তা-ও আর চড়বে না!

বসিরহাটের পিঁফা গ্রামের কুলসুম বেগম, ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘লকডাউনে বিড়ি তৈরি বন্ধ হওয়ায় ভেবেছিলাম শহরে লোকের বাড়ি খেটে পেট চালাব। কিন্তু করোনার ভয়ে কেউ বাড়িতে ঢুকতেই দিচ্ছেন না আমাদের। আয়ের সব পথই বন্ধ।’’

বসিরহাট মহকুমা বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘বসিরহাট মহকুমা জুড়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বিড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। প্রচুর মহিলাও এই পেশায় আছেন। মালিক বা এজেন্টরাই বিড়ি শ্রমিকদের কাঁচামাল সরবরাহ করেন। কিন্তু কাঁচামালই তো আসছে না। ফলে থেমে গিয়েছে কাজ।’’ কৌশিক আরও জানান, এক হাজার বিড়ি বাঁধলে আগে মিলত ৭০ টাকা। এখন মেলে ১৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু কোনও টাকাই এখন আসছে না শ্রমিকদের হাতে। সরকার যদি কোনও ভাবে বিড়ি শ্রমিকদের সহযোগিতা করে, তবে ভাল হয় বলে মত তাঁর।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement