উচ্ছেদের আগে নোটিস নেই কেন

সোমবার বারুইপুরে রেললাইনের পাশে আচমকা উচ্ছেদ অভিযান এবং তার জেরে অবরোধের ঘটনায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র মেনে নিয়েছেন, উচ্ছেদ অভিযান ঠিক নিয়ম মেনে হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৯
Share:

এমন শৌচালয় ভাঙাকে কেন্দ্র করেই বাধে অশান্তি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

ট্রেন চালানোই হোক বা রেল প্রশাসন সামলানো— দু’টো বিষয়েই যে শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তাদের ব্যর্থতা বারবার প্রকাশ পাচ্ছে, তা কার্যত মেনেই নিচ্ছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সোমবার বারুইপুরে রেললাইনের পাশে আচমকা উচ্ছেদ অভিযান এবং তার জেরে অবরোধের ঘটনায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র মেনে নিয়েছেন, উচ্ছেদ অভিযান ঠিক নিয়ম মেনে হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘‘এর পর থেকে সব পক্ষর সঙ্গে আলোচনা করে ছুটির দিনে এই ধরনের কাজ করা হবে।’’

বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান শক্তি রায়চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছেন, রেল দফতরের অনুমতি নিয়েই বারুইপুর পুরসভা এলাকায় শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছিল। বারুইপুর পুরসভা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে রেল দফতরে লিখিত ভাবে জানানোর পরেই রেল লাইন সংলগ্ন ১ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তি এলাকায় পুরসভার তরফে ১৩টি শৌচালয় তৈরি করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আমার শৌচালয়’ প্রকল্পের অধীনে ওই শৌচালয় গুলি তৈরি করা হয়েছিল।

Advertisement

নিত্যযাত্রীরাও এই চরম দুর্ভোগের পিছনে রেলের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দুষছেন। তাঁদের বক্তব্য, যদি দখলদার উচ্ছেদ করতেই হয়, তবে তা সপ্তাহের প্রথম দিনে কেন? রবিবারও তো ওই কাজ করা যেতে পারত। তাতে হাজার হাজার নিত্যযাত্রীকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থেকে ভোগান্তি পোহাতে হত না।

রেল সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তারা রেল সুরক্ষা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আচমকাই রেললাইনের পাশে দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছিলেন। দানা বাঁধছিল প্রতিবাদও।

এর পর প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে পুরসভার তৈরি করা একাধিক বাঁধানো শৌচাগার ভেঙে দিতেই আগুনে ঘি পড়ে। স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে রেল লাইনে সিমেন্টের স্লিপার ফেলে ট্রেন অবরোধ শুরু করেন। ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটে। এর জেরেই শিয়ালদহ স্টেশনে আটকে পড়েন কয়েক হাজার নিত্যযাত্রী।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, রেল কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে কোনও আলোচনায় বসা দূরের কথা, আগাম নোটিসও দেননি। ফলে লাইনের পাশে আচমকা ভাঙাভাঙি শুরু করতেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, নতুন ওই শৌচাগারগুলি তৈরি হওয়ায় পরিবেশ কিছুটা উন্নত হয়েছিল। কারণ, শৌচাগার না থাকায় এর আগে অনেকেই লাইনের ধারে শৌচকর্ম সারতেন। তাতে লাইনেরই ক্ষতি হত।

নিত্যযাত্রীরা বলছেন, দমদম থেকে বেলঘরিয়ার দিকে চার নম্বর লাইনের পাশে দীর্ঘদিন ধরেই
গজিয়ে উঠেছে সার সার অস্থায়ী শৌচাগার। একই অবস্থা দমদম থেকে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্তও। পাশাপাশি শিয়ালদহ ডিভিশনের বিভিন্ন শাখার স্টেশনগুলির বেশির ভাগ এলাকাই দখল হয়ে গিয়েছে বহুদিন। রেল সেগুলি তোলার চেষ্টা করেনি এত দিন।

বছর খানেক আগে পূর্ব রেলেরই মালদহ স্টেশনে এই জবর দখল উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে তুলকালাম ঘটে। মারাও যান এক জন। এই ঘটনার পরে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘ওই ভাবে আর উচ্ছেদ অভিযান করা হবে না। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই উচ্ছেদ করা হবে।’ কিন্তু বারুইপুরে ফের রাতারাতি উচ্ছেদ অভিযানে নেমে পড়ায় রেলের অন্দরেই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

যাত্রীরা বলছেন, স্টেশনগুলি ফাঁকা হোক তাঁরাও চান। কিন্তু নিয়ম মেনে পুনর্বাসন দিয়ে তবেই জবর দখলকারীদের সরাতে হবে। এই ভাবে গায়ের জোরে নয়। বারুইপুরের মতো অভিযান চালাতে গেলে গোলমাল বাড়বে বই কমবে না। যাত্রীদের দাবি, যখন প্রথম দখল হচ্ছে, তখনই তাদের সরিয়ে দেওয়া হোক রেলের তরফে।

এক পুর কর্তার কথায়, ‘‘আচমকা শৌচালয় ভেঙে দেওয়ায় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে। ওই সব বস্তি এলাকায় প্রায় সাড়ে চারশো পরিবার রয়েছে। আপাতত কোনও বিকল্প ব্যবস্থাও তৈরি করা যায়নি।’’ বারুইপুর পুরসভার চেয়ারম্যান শক্তিবাবু বলেন, ‘‘আমরা বিকল্প ব্যবস্থার দাবিতে বারুইপুর আরপিএফ দফতর ঘেরাও করব। রেল দফতরকেও বিষয়টি লিখিত জানানো হয়েছে।’’

শিয়ালদহ ডিভিশনের এক রেল কর্তা বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছি। সব দিক ভেবেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন