চলন্ত ট্রেনে এক মহিলার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠল। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বারুইপুরে ডাউন ডায়মন্ড হারবার লোকালে। রেল পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাসিডে দুই মহিলা যাত্রী গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মূল দুষ্কৃতী এখনও অধরা। তবে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্বরূপ হালদার নামে এক জমি ব্যবসায়ীকে সোমবার কল্যাণপুর স্টেশন থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল? রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ি বারুইপুরের পরের স্টেশন কল্যাণপুরে। তিনি যাদবপুরের একটি বিউটি পার্লারে চাকরি করেন। রোজ রাতে ওই ট্রেনেই বাড়ি ফেরেন। রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ডাউন ডায়মন্ড হারবার লোকালের মহিলা কামরায় জনা দশেক যাত্রী ছিলেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বারুইপুর থেকে ট্রেন ছাড়ার পরেই মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় এক যুবক হাতে অ্যাসিডের বোতল নিয়ে ওঠে। ট্রেনটি কিছু দূর যাওয়ার পরেই সে ওই মহিলার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। এর পরে চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে যায়।
অ্যাসিডে ওই মহিলা ছাড়াও আর এক যাত্রী জখম হন। রাতেই দুই মহিলাকে বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ভর্তি করা হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অ্যাসিডে ওই মহিলার মুখের বাঁ দিক ঝলসে গিয়েছে। বাঁ চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, ওই মহিলা বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
ওই মহিলার বাবা নিরঞ্জন মাকাল জানান, স্বরূপ হালদার নামে এক জমি ব্যবসায়ী মাস আটেক আগে তাঁদের বাড়ির পিছনে প্রায় ছ’বিঘা জমি ছোট ছোট প্লট করে বিক্রি করছিল। নিরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, তাঁর জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল স্বরূপ। বিষয়টি নিয়ে কয়েক বার স্বরূপের দলবল নিরঞ্জনবাবুর ছেলে তন্ময়কে মারধরও করে বলে অভিযোগ। পুলিশে সব জানালে গ্রেফতার হয় স্বরূপ। কিন্তু অভিযোগ, মাসখানেক পরে ফিরে এসে সে নিরঞ্জনবাবুকে শাসানি দেওয়া শুরু করে। তাঁর মেয়ের মুখে অ্যাসিড ছুড়ে উচিত শাস্তি দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেয়। নিরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে বছর আটেক বিবাহ-বিচ্ছিন্না। আক্রোশের বশেই মেয়ের উপরে এই হামলা বলে অভিযোগ করেছেন নিরঞ্জনবাবু।
তদন্তকারীরা জানান, কোনও দুষ্কৃতীকে দিয়েই এই কাজ করানো হয়েছে বলে অনুমান। এর পাশাপাশি রাতে ট্রেনের মহিলা কামরা কেন অরক্ষিত ছিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। রাতে মহিলা কামরায় রেল পুলিশ বা রেলরক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) পাহারা থাকাই নিয়ম। রেল পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই রাতে কামরা কেন অরক্ষিত ছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে।