প্রিয়জনকে খুঁজতে মর্গে উঁকি

কোনও রকমে মুখ চাপা দিয়ে মর্গ থেকে বেরিয়ে এলেন দিল্লির তুঘলকপুরীর বাসিন্দা মঞ্জুদেবী। চোখে জল। তবু তারই মধ্যে মিশে খানিক স্বস্তি। সদ্য জানতে পেরেছেন, যাঁকে খুঁজছেন, সেই পড়শির দেহ নেই মৃতের দলে।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৩
Share:

কোনও রকমে মুখ চাপা দিয়ে মর্গ থেকে বেরিয়ে এলেন দিল্লির তুঘলকপুরীর বাসিন্দা মঞ্জুদেবী। চোখে জল। তবু তারই মধ্যে মিশে খানিক স্বস্তি। সদ্য জানতে পেরেছেন, যাঁকে খুঁজছেন, সেই পড়শির দেহ নেই মৃতের দলে।

Advertisement

রবিবারের পর থেকে মঞ্জুদেবীর পড়শি, আটষট্টি বছরের ধন্নো শর্মার খোঁজ মিলছিল না। সোমবার পর্যন্ত যে দেহগুলি সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে ছিল, সেখানেই তন্নতন্ন করে খুঁজছেন মঞ্জুদেবীর মতো বহু মানুষ। উত্তরপ্রদেশের জুনপুর জেলার সত্তর বছরের বৃদ্ধ হৃদয়নাথ পান্ডে এসেছিলেন মেলায়। রবিবারের পর থেকে তাঁরও খোঁজ পায়নি পরিবার। এ বার মেলায় হারানো মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার মতো। তাদের অনেকে এখনও নিখোঁজ। বেঁচে আছে তো, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন আত্মীয়-পরিজনেরা।

কচুবেড়িয়ায় পদপিষ্ট হয়ে ৬ জনের মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তীর্থযাত্রীদের তরফ থেকে। ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজের সংখ্যা এখনও অনেক। হাসপাতালে রয়েছেন ভিন রাজ্য এবং নেপাল মিলিয়ে মোট ১৩ জন। তাঁদের অনেকেই বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছেন না বলে জানাচ্ছে প্রশাসনের একটি সূত্র।

Advertisement

নিখোঁজ মানুষের খোঁজ-খবর করতে সরকারি তরফে একটি ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শিবির চলে মেলায়। সেখানকার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গঙ্গাসাগর মেলায় হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য প্রতিনিয়ত ঘোষণা করা হয় মাইকে। তারমধ্যে কাউকে পাওয়া না গেলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বজরং পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই সংস্থা আলাদা করে বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যাম্প চালায়। সংস্থার মেলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক বিক্রম দুবে বললেন, ‘‘এ বার গঙ্গাসাগর, কচুবেড়িয়া থেকে প্রায় ৬ হাজার এবং লট-৮ ঘাট থেকে ৩ হাজার মানুষ হারিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা সাগরে ২ হাজার এবং লট-৮ থেকে প্রায় ৮০০ মানুষকে খুঁজে দিতে পেরেছি। বাকি আরও প্রায় ৮৫ জন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের কলকাতা থেকে নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’

হাসপাতালের আধিকারিকেরা জানালেন, রবিবারের পর থেকে আরও বেশি করে মানুষ আসছেন হাসপাতালগুলিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষের খোঁজে। তাঁদের প্রথমে নামের তালিকা দেখিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে ভর্তি রোগীদের দেখানো হচ্ছে। তারপরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মর্গে।

যদি কারও খোঁজ মেলে...।

অন্য দিকে, কচুবেড়িয়ার ঘটনা গাফিলতিতেই ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলল রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার তাঁরা কাকদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি গঙ্গাসাগর মেলার রোগীদের দেখতে গিয়েছিলেন। জেলাশাসকের গ্রেফতারি ও বরখাস্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। প্রশাসনের তরফে অবশ্য আগেই দাবি করা হয়েছে, মেলায় অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন ওই ছ’জন। এ দিন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও গিয়েছিলেন হাসপাতালে অসুস্থদের সঙ্গে দেখা করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন