অবস্থান বিক্ষোভে মহিলা সমিতির নেত্রীরা। ছবি: নির্মল বসু।
রাজনৈতিক সংঘর্ষ কেড়ে নিয়েছে ভিটে। খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় শিবিরেই দিন কাটছে। কিন্তু আর কত দিন? বর্ষা এসে গিয়েছে। রমজান মাস চলছে। সবাই চাইছেন গ্রামে ফিরতে। ঘরছাড়া সিপিএম সমর্থকদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে সোমবার বসিরহাটের মহকুমাশাসকের কাছে ৬ দফা দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ এবং স্মারকলিপি পেশ করল বামপন্থী এই সংগঠন। মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি দাবিগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ দিন অবস্থান বিক্ষোভে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, পানিগোবরা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এখনও ঘরছাড়া। যাঁদের ঘর পুড়েছে তাঁরা ছাড়াও ঘর পোড়েনি এমন অনেকেও আতঙ্কে গ্রামে ফিরতে পারছেন না। সংঘর্ষের পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
গত ১ জুন বসিরহাট ২ ব্লকের পানিগোবরা গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের জেরে খান তিরিশ ঘর পুড়েছিল। ভাঙচুর হয় আরও বেশ কিছু বাড়িতে। ঘরছাড়া দু’দলের কয়েকশো মানুষ। মহকুমা প্রশাসনের তরফে চাল, ত্রিপল, জামাকাপড়, শিশুখাদ্য, শুকনো খাবার দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ উঠছে। নানা টালবাহানার পরে প্রশাসনের পক্ষে ওই গ্রামে পোড়া সরঞ্জাম সরিয়ে বাঁশের খুঁটির উপর দরমার বেড়া এবং পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়। দুর্গতদের ত্রাণের খাবারের সঙ্গে রান্নার সরঞ্জাম এবং পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়।
মহকুমা শাসকের সঙ্গে আলোচনার শেষে বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএম নেত্রী সোমা আড়তদার বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে ১৭টি পরিবারের ঘর তৈরির জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। নীতেশবাবু ঘর এবং নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমাদের আশা, কয়েক দিনের মধ্যেই রাজবেড়িয়া ত্রাণ শিবিরে থাকা সকলেই একসঙ্গে গ্রামে ফিরবে।’’ সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্যনেত্রী তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রশাসনকে একটু মানবিক হতে বলা হয়েছে।’’
তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে পানিগোবরা গ্রামের অনেকেই শুধু আক্ষেপ করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘গ্রামে সব দলের মানুষ এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকতাম। কিন্তু কী যে ঘটলো, পড়শিরাই শত্রু হয়ে উঠল। সেই সুযোগে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা সব কিছু পুড়িয়ে দিল। সিপিএম, তৃণমূল কেউ ছাড় পেল না।’’