জমিজমা, গয়না বেচে পাওনা মেটানোর চেষ্টা

এখন তাঁদের তোলা টাকা আমানতকারীদের মেটাচ্ছে পরিবার। সেটা করতে গিয়ে নিতান্তই করুণ তাঁদের অবস্থা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৬
Share:

দুশ্চিন্তায়: লড়াই চলছে বন্দনার। —নিজস্ব চিত্র।

ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার হয়ে টাকা তোলার কাজ করতেন কারও স্বামী বা কারও স্ত্রী। আমানতকারীদের চাপে অপমানে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা। এখন তাঁদের তোলা টাকা আমানতকারীদের মেটাচ্ছে পরিবার। সেটা করতে গিয়ে নিতান্তই করুণ তাঁদের অবস্থা।

Advertisement

বিভাস হালদার এ রকমই ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। দেনার দায়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের। বাজার থেকে তাঁর তোলা টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে পথে বসার জোগাড় কুলপির ভগবানপুরের বাসিন্দা, তাঁর স্ত্রী বছর চল্লিশের বন্দনা হালদারের। বন্দনা বলেন, ‘‘সহায়-সম্বল তেমন কিছু নেই। টাকা শোধ দিয়েছি মাঠের কড়াই বেচেও।’’

বছর পাঁচেক আগে একাধিক অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের কাজ নেন বিভাস। কুলপি ব্লকের বেলপুকুর পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান হওয়ার সুবাদে এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন বছর পঞ্চাশের বিভাস। অল্প সময়ের মধ্যেই আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা তুলে ফেলেছিলেন। ওই টাকার মধ্যে তাঁর নিজের দশ লক্ষ টাকাও ছিল।

Advertisement

কিন্তু লগ্নি সংস্থাগুলি যখন আস্তে আস্তে তালাবন্ধ হতে শুরু করে, তখনই আমানতকারীরা টাকা ফেরত পেতে তাঁর বাড়িতে আসতে থাকেন। নিশ্চিন্তপুরের বাজারে বিভাসের একটি ইমারতি দ্রব্যের দোকান আছে। আমানতকারীরা হানা দেন সেখানেও। শেষমেশ তাঁদের হামলায় জেরবার হয়ে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বিভাস। মাস দু’য়েক পরে, ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে মন্দিরবাজার থানার পুলিশ বন্দনাকে ফোন করে বিভাসের দেহ শনাক্ত করার জন্য থানায় আসতে বলে। দেহ উদ্ধার হয়েছিল বীরেশ্বরপুর গ্রামের কাছে একটি বাবলা গাছের ডালে কাপড়ের ফাঁস জড়ানো ঝুলন্ত অবস্থায়।

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই লড়াই শুরু বন্দনাদেবীর। দুই ছেলের একজন উচ্চ মাধ্যমিক ও অন্য জন মাধ্যমিকের পড়ুয়া। মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বন্দনা জানান, তাঁর সমস্ত অলঙ্কার বেচে দেনা শোধ করেছেন। দোকান, জমি-জমা বিক্রি করে টাকা মিটিয়েছেন। কিন্তু আমানতকারীরা ছাড়ছেন না তাঁকে। সব মিলিয়ে খুবই বিপন্ন অবস্থা বন্দনার।

প্রায় একই পরিণতি ডায়মন্ড হারবারে পঞ্চগ্রাম হালদারপাড়ার আনন্দ হালদারের। তাঁর স্ত্রী মনোরমা কংগ্রেসের প্রাক্তন উপপ্রধান। কয়েকটি ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের কাজ নিয়েছিলেন তিনি। এলাকায় পরিচিত হওয়ার সুবাদে অল্প সময়েই আমানতকারীদের কাছে থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তোলেন মনোরমা। কিন্তু এক এক করে যখন সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে যায় তখনই আমানতকারীরা বাড়ি এসে টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন। নিজের সঞ্চিত টাকা থেকে আমানতকারীদের কিছু দিতে পারলেও সব টাকা মেটাতে পারেননি। পাওনাদারেরা বাড়ি এসে গালিগালাজ করতেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে একদিন ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস জড়িয়ে আত্মঘাতী হন মনোরমা।

তাঁর দুই মেয়ে বিবাহিত। স্বামী আনন্দ এখন কলকাতার এক গ্রিল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। তিনিও নিত্য লড়াই করে চলেছেন পাওনা মেটাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন