ধাওয়া করে যুবককে কোপ শ্যামনগরে

এক সময় দা হাতে থাকা ব্যক্তি ধরে ফেলেন অন্য জনকে। তার পরেই কোপ। প্রথম কোপ কানে। মাথা বাঁচাতে মাঝবয়সি দু’হাত উপরে তুলে আটকানোর চেষ্টা করেন। তারই মধ্যে দায়ের বাট দিয়ে ফের মাথায় আঘাত করে দুষ্কৃতী। ততক্ষণে আশপাশের লোকেরা ছুটে এসেছেন। তা দেখেই পালিয়ে যায় দুষ্কৃতী। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪১
Share:

এখানেই ঘটনাটি ঘটে। ইনসেটে, হিরন্ময় মিত্র। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

তখন দুপুর। তবে রাস্তা-ঘাট মোটেও সুনসান নয়। তারই মধ্যে রাস্তায় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে তির বেগে ছুটছেন মাঝবয়সি এক ব্যাক্তি। তাঁর পিছনে হাতে দা হাতে ছুটছেন এক জন। ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য।

Advertisement

এক সময় দা হাতে থাকা ব্যক্তি ধরে ফেলেন অন্য জনকে। তার পরেই কোপ। প্রথম কোপ কানে। মাথা বাঁচাতে মাঝবয়সি দু’হাত উপরে তুলে আটকানোর চেষ্টা করেন। তারই মধ্যে দায়ের বাট দিয়ে ফের মাথায় আঘাত করে দুষ্কৃতী। ততক্ষণে আশপাশের লোকেরা ছুটে এসেছেন। তা দেখেই পালিয়ে যায় দুষ্কৃতী।

সোমবার দুপুরে শ্যামনগরে ২২ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন আদর্শ পল্লির এই ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। জখম ব্যক্তির নাম হিরন্ময় মিত্র। মাস তিনেক আগের একটি খুনের ঘটনায় তিনি এবং তাঁর ছেলে প্রত্যক্ষদর্শী।

Advertisement

অভিযোগ, ওই মামলায় তাঁরা যাতে সাক্ষ্য না দেন, সেই জন্য অভিযুক্তদের সাঙ্গপাঙ্গোরা তাঁদের বারবার প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছিল। এ দিনের ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর স্থানীয়েরা ওই দুষ্কৃতীর বাড়িতে চড়াও হয়। তার বাবাকে আটকে রাখে। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। আপাতত তাঁকে থানাতেই রাখা হয়েছে। এই ঘটনার অভিযুক্ত শ্যামল কেউট পলাতক। হিরন্ময় কল্যাণীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ মে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট মিটে যাওয়ার দু’দিন পরে পিনকল মোড়ের বাসিন্দা রাজু সিংহকে ২২ নম্বর রেলগেটের কাছে কুপিয়ে খুন করা হয়। রেলগেটের পাশেই হিরন্ময়বাবুর দোকান। তিনি পুরো ঘটনা দেখেন। তিনি এবং তাঁর ছেলে শুভ মিত্র দুষ্কৃতীদের তাড়াও করেছিলেন। ওই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশ মূল অভিযুক্ত তরুণ সিংহ এবং টন্টা বেরাকে গ্রেফতার করে। খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন শুভ এবং তাঁর বাবা।

শুভ জানান, গত ১৫ দিন ধরে ধৃতদের অনুগামীরা রাস্তাঘাটে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা এই বলে শাসাচ্ছে যে তরুণদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে। দিনকয়েক আগে বাড়িতে গিয়েও কয়েকজন দুষ্কৃতী শাসিয়ে আসে। দিন পাঁচেক আগে কয়েকজন দুষ্কৃতী রাতে বাড়ি ফেরার পথে হিরন্ময়কে আটকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে গুলি করে খুনের হুমকি দেয়। তার পরেও দমেননি তাঁরা। শুভর অভিযোগ, শ্যামল এবং তার দাদা গোবিন্দ কেউট গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের উপরে টানা নজরদারি চালাচ্ছিল।

শুভ বলেন, ‘‘ওদের ধারাবাহিক হুমকির জন্য দিনকয়েক আগে জগদ্দল থানায় অভিযোগও দায়ের করি।’’ স্থানীয়েরা জানান, পুলিশ অভিযুক্তদের বাড়িতে এলেও তাদের ধরতে পারেনি। বাড়ির লোকেদের সাবধান করে যান। অভিযোগ, তার পরেও হুমকি থামেনি। দিন তিনেক আগেও রাস্তায় তাঁকে ফের হুমকি দিয়ে তাঁকে সাক্ষ্যদান থেকে বিরত থাকতে বলে শ্যামল এবং তাঁর দাদা।

সোমবার দুপুর বারোটা নাগাদ দোকান থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন হিরন্ময়। প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, পাশের দোকানেই ওঁত পেতে ছিল শ্যামল। হিরন্ময় রাস্তায় নামতেই তাঁকে দা নিয়ে তাড়া করে সে। সে মত্ত অবস্থায় ছিল বলে হিরন্ময়কে নাগালে পেয়েও তেমন জখম করতে পারেনি। স্থানীয়েরা তাড়া করায় সে পালিয়ে যায়।

শুভ জানান, শ্যামলের সঙ্গে তার দাদা গোবিন্দও ছিল। সে অন্য একটি জায়গায় অপেক্ষা করছিল। তিনি বলেন, ‘‘শ্যামল বাবাকে ঘায়েল করলেই সে এসে জুটত। খবর পেয়ে আমি এসে দেখি রেলগেটের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে গোবিন্দ। আমাকে দেখে সরে যায়।’’ তিনি জানান, হিরন্ময়ের কানে আঘাত রয়েছে। মাথায় আঘাতের জন্য বমি হচ্ছে। মাথার সিটি স্ক্যান হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে ভর্তি রেখেছেন।

এই ঘটনার পরে শ্যামলের বাড়িতে চড়াও হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তাঁদের গ্রেফতার করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন