নির্জন: এই রাস্তার পাশেই বাড়ি নিহত দম্পতির। এখান দিয়েই যেতে হয় সকলকে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
‘জেঠু-জেঠিমা’র ভরসায় ওঁরা পথ চলতেন। সেই আশ্রয়টাই হারিয়ে গেল চিরকালের মতো।
অশোকনগরের দিঘড়া-মালিকবেরিয়া পঞ্চায়েতের হাট ন’পাড়ার বাসিন্দা, বৃদ্ধ মদনমোহন নন্দী এবং তাঁর স্ত্রী অর্চনাদেবী খুন হয়েছেন। বিপাকে পড়েছেন সুজাতা দে, অর্পিতা দে এবং তাঁদের মতো অনেক তরুণী-যুবতী। এতদিন তাঁরা ওই বৃদ্ধ দম্পতির ভরসাতেই রাতবিরেতে হাট ন’পাড়ায় যাতায়াত করতেন। এলাকাটি নির্জন। ‘খারাপ’ লোকের উৎপাত রয়েছে। মদনবাবুদের বাড়ির ৪০০ মিটারের মধ্যে আর কোনও বাড়িঘরও নেই। কেউ বিপদে পড়লে তাই এগিয়ে আসতেন তাঁদের ওই ‘জেঠু-জেঠিমা’। কিন্তু এ বার কী হবে?
বাড়িতে ঢুকে কে বা কারা ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করেছে, সেই রহস্যের এখনও কিনারা হয়নি। কিন্তু তাঁদের জন্য অনেক ‘খারাপ’ লোক যে এতদিন কোনও ‘বাড়াবাড়ি’ করতে সাহস করেনি, তা মানছেন সকলেই। মদনবাবুদের বাড়ির সামনের রাস্তাটাই ন’পাড়ার প্রধান রাস্তা। ফলে, সকলকেই সে রাস্তা ধরতে হয়। সুজাতা বলেন, ‘‘দিনে-রাতে ওই রাস্তায় বাইরে থেকে যুবকেরা এসে ভিড় বাড়ায়। রাস্তার পাশে মদের আসর বসায়। মেয়েদের একা পেলেই কটূক্তি করে, অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। ভয় লাগে। জেঠু-জেঠিমার জন্য মনে জোর পেতামন। একবার ওই বাড়িতে ভয় পেয়ে ঢুকেও পড়েছিলাম। এখন কোথায় যাব?’’
প্রথম বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা বলেন, ‘‘রাস্তায় আলো থাকলেও জ্বলে না। যুবকেরা বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েদের দেখলে কটূক্তি করে। মদ-জুয়ার আসর বসে। জেঠু-জেঠিমা আমাদের নিরাপত্তা দিতেন। কাউকে বাড়িতে ঢুকে পড়তে বলতেন, কাউকে এগিয়ে দিয়ে আসতেন। এখন চিন্তা বাড়ল।’’
গ্রামবাসীরা জানান, বছর চারেক আগে এখানে একজন খুন হয়েছিলেন। তারপর থেকে নির্জন এলাকাটিতে দুষ্কৃতীরা নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। পুলিশি নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। তাঁদের দাবি, মাঝেমধ্যে পুলিশের গাড়ি ঘুরে যায় ঠিকই, তবে তা যথেষ্ট নয়। গ্রামবাসী এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প করার দাবিও তুলেছেন। ওই রাস্তা দিয়ে মাছ-আনাজ ব্যবসায়ীরাও রাতে হাটে-বাজারে যাতায়াত করেন। তাঁরাও ভয় পাচ্ছেন।
হাট ন’পাড়ায় বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। চলতি বছরে খুন এই প্রথম হলেও বছরভর অশোকনগর থানা এলাকায় চুরি-ডাকাতি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটেই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকায় অনেকেই অসন্তুষ্ট। অভিোগ, বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে শহরে। নদিয়ার সীমানাবর্তী হওয়ায় ওই জেলা থেকেও দুষ্কৃতীদের অশোকনগরে এসে আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছে অতীতে।
অশোকনগরে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনকে তোয়াক্কা করছে না।’’ বিধায়ক ধীমান রায় অবশ্য বলেন, ‘‘হাট ন’পাড়ার ঘটনাটি পারিবারিক বিবাদের ফলে ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। চুরি-ডাকাতি যা-ই ঘটুক পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’
বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর অবশ্য দাবি করেছেন, আগের প্রতিটি ঘটনায় দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিনে-রাতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে।