অবরোধ তুলতে এসে বিহ্বল সরকারি কর্তারাও

টালির ভাঙাচোরা একখানা ঘুপচি ঘর। সেখানে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বাড়ির মেজো মেয়ে সেলিমা। সুহানার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে সে-ও। মাথায়, বুকে, পিঠে চোট লাগার পরে তার অবস্থা সংকটজনক ছিল বলে জানিয়েছিলেন বসিরহাট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। বমিও হচ্ছিল। শুক্রবার তার শারীরিক অবস্থা অবশ্য স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নির্মল বসু

স্বরূপনগর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৮
Share:

হাসপাতালে সেলিমা।

টালির ভাঙাচোরা একখানা ঘুপচি ঘর। সেখানে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বাড়ির মেজো মেয়ে সেলিমা। সুহানার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে সে-ও। মাথায়, বুকে, পিঠে চোট লাগার পরে তার অবস্থা সংকটজনক ছিল বলে জানিয়েছিলেন বসিরহাট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। বমিও হচ্ছিল। শুক্রবার তার শারীরিক অবস্থা অবশ্য স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তার চিকিৎসার দায়িত্বও রাজ্য সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত।

Advertisement

কিন্তু মেয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে কবে স্বাভাবিক জীবনে যেতে পারবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনার শেষ নেই বাবা রফিকুল ইসলামের। দিনমজুরি করে তিন ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চালান তিনি। বললেন, “আমরা গরিব মানুষ বলেই হয় তো এমন ব্যবহার করেন শহরের চিকিৎসক, নার্সরা। না হলে কেন রক্ত আনা সত্ত্বেও সুহানাকে এ ভাবে মরতে হল?”

সেলিমার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব ছিল সুহানার। এক সঙ্গে স্কুলে যেত-আসত। খেলাধূলা করত। রফিকুলের স্ত্রী জাহানারা বিবি বলেন, “কেন যে লাইসেন্সবিহীন যন্ত্রচালিত ভ্যানরিকশা চলে, সেটাই বুঝতে পারি না। ওদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ নেই।”

Advertisement

এই ঘরেই থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে কিশোরীটি। নিজস্ব চিত্র।

এ দিন স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়াতে বিক্ষোভ চলাকালীন রাস্তায় বসে কাঁদছিলেন সুহানার বাবা-মা। সেই দৃশ্য দেখে অবরোধ তুলতে এসেছিলেন যে সরকারি আধিকারিকেরা, তাঁদেরও অনেককে চোখ মুছতে দেখা গেল।

পুষ্পেন্দুবাবু রীতিমতো হাতজোড় করে বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যাও একই অনুরোধ করেন। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রশাসন কী পদক্ষেপ করে দেখুন। আমরা কেউ জোর করছি না। তবে অনুগ্রহ করে অবরোধ তুলে নিন।” বিডিও, সিআই, ওসি সকলেই যথেষ্ট সহমর্মিতা এবং ধৈর্য দেখিয়ে অনুরোধের ভাষাতেই কথা বলেছেন এ দিন।

সুহানার জ্যাঠা রেজাউল বলেন, “মেয়েটাকে রক্ত দেওয়ার জন্য নার্সের পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলাম। কিন্তু তিনি চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেছিলেন। চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি পাঠিয়েছেন নার্সের কাছে। এই টানাপড়েনেই প্রাণ গেল মেয়েটার। বার বার বলতে গেলে খারাপ ব্যবহারও সহ্য করতে হয়েছে চিকিৎসক-নার্সদের কাছ থেকে।”

সুহানার মৃত্যুসংবাদে এ দিন স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্কুলের শিক্ষিকারা আসেন তাদের বাড়িতে। প্রতিবেশীরা বলেন, “বাঁচার জন্য কয়েক ফোঁটা রক্ত চেয়েছিল মেয়েটা। সময় মতো রক্ত আনা হলেও বাঁচানো গেল না। এই আফসোস যাওয়ার নয়।” অভিযুক্ত চিকিৎসক, নার্সের শাস্তির দাবি তুলেছেন সকলেই। ওই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলেরও দাবি উঠেছে। যে ভ্যানচালকের দোষে এমন দুর্ঘটনা, তাকেও গ্রেফতারের আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। দু’এক দিনের মধ্যেই অভিযুক্ত ভ্যান চালক ধরা পড়বে বলে আশ্বস্ত করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন