বেহাল অবস্থায় পড়ে রামচন্দ্রপুর ভাগাড়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
জঞ্জাল নিয়ে ঝঞ্ঝাট পানিহাটিতে। শিবরাম চক্রবর্তীর হর্ষবর্ধন আর গোবধর্র্নের গল্পের সঙ্গে বেজায় মিল।
পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে গত তিন দশকে যাঁরাই বসেছেন তাঁদের রাতের ঘুম ছুটেছে কোথায় নিজেদেরই আবর্জনা নিজের পুর এলাকায় লুকিয়ে ডাঁই করা যায় তা নিয়ে। বর্জ্য বিভাগের কর্মীদের দিনের থেকেও রাতে ডিউটি করতে হয়েছে চোখ-কান খোলা রেখে। অন্ধকারে এক ওয়ার্ডের আবর্জনা তুলে নিয়ে অন্য ওয়ার্ডে ডাঁই করা। আবার সেই ওয়ার্ডের আবর্জনা আরেক ওয়ার্ডে ফেলা। এর জন্য বিস্তর তাড়াও খেতে হয়েছে সাফাইকর্মীদের। রাতের অন্ধকারও আড়াল করতে পারেনি বহু সময়। বছর দুই আগে জনা কয়েক সাফাইকর্মীকে বাসিন্দাদের ইট পাটকেলও হজম করতে হয়েছিল ‘ইধরকা মাল উধরের’ পুর পরিষেবা দিতে গিয়ে।
পানিহাটির দীর্ঘদিনের বাসিন্দা আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা সাম্প্রতিক সমস্যা নয়। জঞ্জাল ফেলা নিয়ে পানিহাটিতে বছরের পর বছর টানাপড়েন চলছেই। পুরসভার ভাগাড়কেও শুধু জঞ্জালের ডিপো করা ছাড়া ব্যবহারের উপযোগী করেননি কেউ।’’ বহুতলের হাওয়ায় ভাসছে পানিহাটিও। বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়ছে জঞ্জাল। রামচন্দ্রপুর ভাগাড় উপচে পড়ছে আবর্জনায়। স্বাধীনতার পর যখন এই ভাগাড় হয় তখন ওই এলাকার জনসংখ্যা যা ছিল এখন তা বহুগুণ বেড়েছে। জনবহুল এলাকায় ভাগাড় থাকা নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। এই বিষয়ে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে এমন বিতর্কেরও ঝড় বয়েছে। তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। সম্প্রতি রামচন্দ্রপুর ভাগাড়ের আশপাশের বাসিন্দারা আন্দোলনে নেমেছেন। রামচন্দ্রপুর ভাগাড় উচ্ছেদ কমিটি নামে সংগঠনও করেছেন। প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল, অবস্থান বিক্ষোভও হয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক, পুরপ্রধান, কাউন্সিলর সবার কাছেই দরবারও করেছেন বলে তাঁদের দাবি। তাতে লাভ কিছু হয়নি। আশ্বাস মিলেছে বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে।
ঘটনাচক্রে পানিহাটির বিধায়ক তৃণমূলের নির্মল ঘোষের ভাই স্বপন ঘোষ পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান। আর নির্মলবাবুর মেয়ে তন্দ্রা ঘোষ যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এই ভাগাড় সেই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডেই। নির্মলবাবু নিজে জঞ্জাল সমস্যার বিষয়ে অবহিত গোড়া থেকেই। বাম আমলে সোচ্চার হয়েছেন এলাকার যত্রতত্র ও বিটি রোডের মতো রাজ্য সড়কের ধারে স্তূপাকৃত জঞ্জাল নিয়ে। এই সবের মিলিত প্রতিফলন ছিল ঘোলার মহিষপোতায় গারবেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। যেখানে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উপাদনের কথা ছিল। ক্ষমতায় এসে নির্মলবাবুরাই সেই প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করেন। যদিও তা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে এলাকার বাসিন্দাদের আপত্তিতে। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘জঞ্জাল নিয়ে যন্ত্রণায় আছি। মহিষপোতায় আবর্জনা থেকে বিকল্প বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবস্থা হচ্ছিল। সেখানেও মানুষকে বোঝানো যায়নি। এখানেও যাচ্ছে না। এ ভাবে চলবে না। গারবেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অন্য দিকে, রামচন্দ্রপুর ভাগাড় সংলগ্ন বাসিন্দাদের সঙ্গে আমরা কথা বলে এগোব।’’