ছেলে সরকারি চাকরি করেন। অথচ বাবার নাম রয়েছে বিপিএল তালিকায়। পঞ্চায়েতের তরফে বিডিওর কাছে প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রাপকদের তালিকাতেও নাম রয়েছে ওই পরিবারের।
পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ প্রাপক-তালিকাভুক্ত।
অতীতে একবার ওই প্রকল্পে বাড়ি পাওয়া পরিবারের নামও রয়েছে তালিকায়। অভিযোগের ফিরিস্তি আরও লম্বা।
ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি তৈরির তালিকা নিয়ে অভিযোগ গেল গাইঘাটার বিডিও-র কাছে। এই সূত্রে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া নিয়েও জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগকারীদের একাংশের দাবি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের তরফে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের প্রাপকদের যে সব তালিকা জমা পড়েছে, তা নিয়ে মোট ৫২টি অভিযোগ এসেছে। ব্লক প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই ওই সব অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বিডিও পার্থ মণ্ডল বলেন, “যে ৫২টি নাম নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে, হয় তাদের এই মুহূর্তে বাড়ি তৈরির প্রকল্পের মধ্যে আনা হচ্ছে না, অথবা তাদের বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। ৫২টির মধ্যে ৩০টির প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, কিছু অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। বাকিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় জলেশ্বর-২ পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া অভিযোগের মধ্যে কয়েকটির সত্যতা মিলেছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। কয়েকটি পঞ্চায়েতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য অভিযোগও এ বিষয়ে রয়েছে। এমন ব্যক্তিদের নাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে, যাঁরা তফসিলি তালিকাভুক্ত নন, অথচ পঞ্চায়েত প্রধান তাঁদের তফসিলি শংসাপত্র দিয়েছেন। তাঁদের তফসিলি কোটায় বাড়ি পাওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের স্থানীয় কোন্দলের প্রভাবও পড়েছে ওই তালিকায়। এমনও হয়েছে, তৃণমূলের এক পক্ষ কারও নাম তালিকায় রাখতে চাইছেন, অন্য পক্ষ তার বিরোধিতা করছেন।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তৃণমূলের ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, “গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি নিয়ে এ সব অভিযোগ সত্যি হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই এই প্রকল্পে প্রকৃত অভাবগ্রস্তদের ঘর পাওয়ার বিষয়ে যেন স্বচ্ছতা বজায় থাকে। সব অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে।”
কারা ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পেতে পারেন?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমত বিপিএল তালিকায় তাঁদের নাম থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তাঁদের ঘরের অবস্থা কেমন, বাড়িতে কত জন রয়েছেন, পারিবারিক আয় কত, সব কিছু হিসেবের মধ্যে আনার পরই এক জন বাড়ি তৈরির টাকা পেতে পারেন। তা ছাড়াও এই প্রকল্পে তফসিলিদের জন্য নির্দিষ্ট কোটা রয়েছে। একটি বাড়ি তৈরির জন্য একজন প্রাপককে তিনটি কিস্তিতে মোট ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। প্রথম কিস্তিতে ১৭ হাজার ৫০০, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪০ হাজার এবং শেষ কিস্তিতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রাপ্য।
এই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া নিয়েও গাইঘাটা ব্লকে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে, নিয়ম অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ১৯৪২ জনকে প্রথম কিস্তির দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় ওই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা গাইঘাটা ব্লকে এসেছে মাস দেড়েক আগে। সরকারি নিয়ম হল, প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরে বাড়ির নির্দিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই অবস্থায় বাড়ির ছবি তুলে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করার পরই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যায়।
কিন্তু প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গাইঘাটা ব্লকে যাঁরা প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেননি। অথচ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ওই সব বাড়ির প্রাথমিক কাজের ছবি ওয়েবসাইটে আপলোড করার কথা ছিল। তবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ব্লকে আসার কথা। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, মাত্র ২৫-৩০টি বাড়ির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। ফলে ওই ক’টি বাড়ির ছবিই তোলা হয়েছে। তা শীঘ্রই ওয়েবসাইটে তুলেও দেওয়া হবে। ফলে সব মিলিয়ে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা কবে ব্লকে আসবে তা নিয়ে জটিলতা দানা বেঁধেছে।
কেন বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করতে দেরি হল?
প্রাপক ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি প্রধান গাইঘাটার বহু মানুষ, যাঁরা বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই এখন খেতে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। কেউ মিস্ত্রি পাচ্ছেন না, কেউ অপেক্ষা করছেন পুরনো ইটের জন্য। কারও পরিবারের কেউ কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁরা ফিরলে তবেই কাজ শুরু করতে পারবেন। সব মিলিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিডিও বলেন, “সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”