ঊষারানিকে প্রায়ই দেখে গ্রাম, পাচ্ছে না পুলিশ

এক জনের দেখা অবশেষে মিলল। অন্য জনের এখনও নয়। লোকসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠা ইস্তক তৃণমূলের যে দুই বিধায়ক উধাও হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দীপালি সাহা সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু মিনাখাঁর ঊষারানি মণ্ডল বেপাত্তাই। অন্তত পুলিশের চোখে। গত ১২ মে, লোকসভা ভোটের শেষ দফায় উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার ব্রাহ্মণচকে গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ঊষারানি ও তাঁর স্বামী, হাড়োয়া ব্লক তৃণমূল সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। বামেদের অভিযোগ, দু’আড়াইশো লোক (অনেকেই সশস্ত্র) নিয়ে মিছিল করে তাঁরা বুথের দিকে যাচ্ছিলেন।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৪:৪৮
Share:

—নিজস্ব চিত্র

এক জনের দেখা অবশেষে মিলল। অন্য জনের এখনও নয়।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠা ইস্তক তৃণমূলের যে দুই বিধায়ক উধাও হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দীপালি সাহা সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু মিনাখাঁর ঊষারানি মণ্ডল বেপাত্তাই। অন্তত পুলিশের চোখে।

গত ১২ মে, লোকসভা ভোটের শেষ দফায় উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার ব্রাহ্মণচকে গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ঊষারানি ও তাঁর স্বামী, হাড়োয়া ব্লক তৃণমূল সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। বামেদের অভিযোগ, দু’আড়াইশো লোক (অনেকেই সশস্ত্র) নিয়ে মিছিল করে তাঁরা বুথের দিকে যাচ্ছিলেন। তার জেরেই সংঘর্ষ বাধে।

Advertisement

সিপিএমের তরফে ১৯ জন এবং তৃণমূলের তরফে ২৭ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তৃণমূলের ১২ জন গ্রেফতার হন, এর মধ্যে ৯ জন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। সিপিএমের ৪ জনকে ধরা হয়েছিল, জামিন পেয়েছেন এক জন। বিধায়ক বা তাঁর স্বামী এখনও আগাম জামিন পাননি, গ্রেফতারও হননি। গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, তাঁরা গ্রামেই আছেন। বিধায়ক প্রয়োজন মতো শংসাপত্রও দিচ্ছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি বসিরহাট রবীন্দ্রভবনে তৃণমূলের অনুষ্ঠানেও মৃত্যুঞ্জয়বাবুকে দেখা যায়। এ দিন মোবাইলে তিনি বলেন, “আমরা বারাসত আদালতে জামিনের আবেদন করেছি। আশা করি, দু’চার দিনের মধ্যে পেয়ে যাব।’’ জামিন না-মঞ্জুর হলে তাঁরা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলেও মৃতুঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন। তার আগেই তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? পুলিশের দাবি, ওঁদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না, গ্রেফতার করা তো অনেক পরের কথা!

বিধায়ক বা তাঁর স্বামীকে ধরা না হলেও স্থানীয় সোনাপুকুর-শঙ্করপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান দীনবন্ধু মণ্ডলকে কিন্তু দমদম থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও তিনি পরে জামিনে পেয়ে যান। দীনবন্ধুবাবু ঘটনাচক্রে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর বোনের দেওর এবং তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের সময়ে ব্রাহ্মণচকের বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও দীপঙ্কর মণ্ডল মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে স্থানীয় কুলটি খাল থেকে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই দু’জনকে তাদের কর্মী বলে দাবি করে দীনবন্ধুবাবু-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল (যদিও যদিও দু’জনের পরিবারই জানিয়েছিল, তাঁরা কোনও দল করতেন না)। সেই মামলার জেরে অভিযুক্তেরা আত্মীয়-পরিজন নিয়ে গ্রামছাড়া হন।

গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, গোড়ায় দীনবন্ধু ও মৃতুঞ্জয়ের সম্পর্ক ভাল ছিল। এক সময়ে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর আশ্রয়েই ছিলেন দীনবন্ধুবাবু। পরে মেছোভেড়ির দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। সেই কারণেই দীনবন্ধুবাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে, তাঁকে গ্রামছাড়া করে পঞ্চায়েত দখল করেন মৃত্যুঞ্জয়বাবুরা। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে ঊষারানি মিনাখাঁ থেকে জেতার পরে আরও সুবিধা হয়। গত বছর সোনাপুকুর-শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। শুরু হয় মেছোভেড়ির দখল রাখার লড়াই।

স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, মেছোভেড়ি থেকে আসা টাকার বখরা নিয়ে ইতিমধ্যে দলের অন্দরে কোন্দল শুরু হয়ে গিয়েছে। তার জেরে প্রায়ই গুলি-বোমার লড়াই বাধছে। যদিও মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, “ঘটনার সময়ে আমরা এলাকাতেই ছিলাম না। ওরা আমাদের ফাঁসানোর জন্য অভিযোগ করেছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিল করে স্লোগান দিতে দিতে কেউ কখনও ভোট দিতে যায়?” বরং পুরনো একটি খুনে অভিযুক্তেরা গ্রামে ঢুকে দাপট দেখাতে যাওয়াতেই গ্রামবাসী তার প্রতিবাদ করেছেন বলে তাঁর দাবি।

সিপিএম অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের আক্ষেপ, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার সত্ত্বেও শাসকদলের বিধায়ক ঊষারানি ও তাঁর স্বামীকে পুলিশ হাতে পেয়েও ধরছে না। তা না হলে অনেকেই যখন ওই দু’জনকে নানা সময়ে এলাকায় দেখতে পাচ্ছেন, পুলিশের নজর এড়াচ্ছে কী করে? ব্যাখ্যা এড়িয়ে এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘তদন্ত চলায় এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন