কী করবে নতুন পুরবোর্ড, আশায় বসিরহাটবাসী

পুরসভার বয়স নয় নয় করে ১৪৪ বছর। কিন্তু তাতে এলাকার কী উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে সন্দিহান পুরবাসী। অনাস্থায় পুরবোর্ড উল্টে যাওয়ায় নতুন পরিচালকদের নিয়ে ফের একগুচ্ছ আশা সঞ্চার হয়েছে বসিরহাট পুরসভার মানুষের মধ্যে। বসিরহাট শহরের উন্নয়ন বলতে এক ইছামতী সেতু ছাড়া এমন আর কিছুই নেই, যা নিয়ে শহরবাসী গর্ব করতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০২:১৪
Share:

পুরসভার বয়স নয় নয় করে ১৪৪ বছর। কিন্তু তাতে এলাকার কী উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে সন্দিহান পুরবাসী। অনাস্থায় পুরবোর্ড উল্টে যাওয়ায় নতুন পরিচালকদের নিয়ে ফের একগুচ্ছ আশা সঞ্চার হয়েছে বসিরহাট পুরসভার মানুষের মধ্যে।

Advertisement

বসিরহাট শহরের উন্নয়ন বলতে এক ইছামতী সেতু ছাড়া এমন আর কিছুই নেই, যা নিয়ে শহরবাসী গর্ব করতে পারেন। ইছামতী-লাগোয়া তিনটি পার্কের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, সেখানকার রেলিংয়ের পাইপ খুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। উধাও হয়েছে পার্কের মধ্যে থাকা রঙিন আলোর ফোয়ারা খুলে নেওয়া হয়েছে। শিশুদের খেলার জন্য দোলনা বসেছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়েছে সে সব। পার্কগুলি এখন শিশুদের খেলার কিম্বা বয়স্কদের বসার জায়গার পরিবর্তে দুষ্কৃতীদের আস্তানা, মদ-জুয়ার আসর আর মাদকসেবীদের আড্ডার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ইটিন্ডা, টাকি এবং মার্টিন রোডের অবস্থাও শোচনীয়। বিশেষ করে ইটিন্ডা রাস্তার নীচ দিয়ে যাওয়া পানীয় পাইপ যত্রতত্র ফেটে জল বের হওয়ায় ওই রাস্তায় শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই জল জমে থাকতে দেখা যায়। পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের অধিকাংশের মানুষ আজও আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পান না।

Advertisement

আর আছে নিকাশির সমস্যা। অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায় শহরের আনাচ-কানাচে। ইছামতী সংস্কারের দাবিও দীর্ঘ দিনের। কিন্তু পাকাপাকি সংস্কার না হওয়ায় নিকাশির সমস্যা থেকেই গিয়েছে।

সমস্যার কথা মেনে নিয়ে তৃণমূল নেতা পার্থসারথি বসু জানান, শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদী এবং পাঁচটি খাল থাকা সত্ত্বেও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই কোমর সমান জল জমে। সর্বত্র রাস্তার উপরে বেআইনি ভাবে নালা বন্ধ করে গজিয়ে উঠেছে দোকান। রাস্তা জুড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মাতৃসদনের বর্তমান চেহারা দেখলে গা শিউরে ওঠে। প্রয়োজনের তুলনায় যাত্রিনিবাস নেই বললেই চলে। শহরের মধ্যে আলোর অভাব-সহ পুর এলাকার সব জায়গায় কেবলই অনুন্নয়নের চেহারা। এ সব নিয়ে স্বভাবতই পূর্বতন বাম এবং কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডকে দুষেছেন তৃণমূল নেতা।

সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা মজুমদারের বক্তব্য, কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে যারা গলা ফাটাচ্ছে, তারা কি জানে না, নতুন করে সাজানো হয়েছে টাউনহল, বোটঘাটে ইছামতী নদীর ধারে হকার্স মার্কেট? তিনি জানান, বিগত বোর্ডের আমলে যাত্রিনিবাস করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে তিনটি পার্ক, দুঃস্থ মহিলাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নালা কাটা, রাস্তা মেরামত হয়েছে। রাজারহাটে বসিরহাট ভবনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ সব কথায় অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি নয় তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বাম এবং কংগ্রেস জমানায় কোনও উন্নয়নই হয়নি বসিরহাটে। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাট শহরের উন্নয়নের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে বড় পরিকল্পনা নিয়েছেন। পানীয় জল, রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জ্যোতিপ্রিয়বাবু আরও জানান, কংগ্রেস জমানায় শহর আলোকিত করার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছিল। এ বার আলোয় ভরিয়ে দেওয়া হবে বসিরহাট পুর এলাকা। একই সঙ্গে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্র্যাফিক, বাস টার্মিনাস তৈরি হবে। সীমান্ত বাণিজ্যের লরি যাতে দিনের বেলায় শহরের মধ্যে দিয়ে না যায়, তারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। বসিরহাট শহরে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ শুরু করা ছাড়াও আগামী দু’আড়াই মাসের মধ্যে হাসনাবাদে কাঠাখালি নদীর উপরে সেতুর কাজও শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ সব নিয়ে কী বলছে বিরোধী দলগুলি?

কয়েক মাসের মধ্যেই বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে উপনির্বাচন। অনাস্থা প্রস্তাব এনে তার আগে তড়িঘড়ি বোর্ড উল্টে দেওয়ার পিছনে সেই রাজনীতিই কাজ করছে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে উপনির্বাচনের দিকে তাকিয়েই চমক দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁদের মত। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “গত তিন বছরে তৃণমূলের রাজ্য পরিচালনার স্বাদ মানুষ পেয়েছেন। যাঁরা পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন পরিত্রাণ চাইছেন। উপনির্বাচনগুলিতে তারই প্রতিফলন ঘটবে বলে তাঁর দাবি। তৃণমূলের তরফে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। বিগত বোর্ডের তাঁদের ভূমিকা নিয়ে সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহার বক্তব্য, কংগ্রেস ছিল পুরবোর্ডের ক্ষমতায়। বামেদের হাতে ছিল মাত্র ৫টি আসন। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে যত প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, সে সবই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ফাঁকা আওয়াজ বলেই কটাক্ষ করেন তিনি।

টাকার জোরেই অনাস্থায় তাঁদের হারতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বাবলি বসু। তিনি বলেন, “সাত দিনের মধ্যে পুরপ্রধান নির্বাচনে আমরাও অংশ নেব। তখন দেখা যাবে, তৃণমূল কী করে।” তিনি জানান, উপনির্বাচনের প্রচারে তাঁরা কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলে পিকনিক গার্ডেনে কংক্রিটের সেতু তৈরি এবং গেস্ট হাউসের টেন্ডার হওয়া-সহ সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি দেবেন। সিপিএম নেতা নিরঞ্জনবাবুও বলেন, “পুরসভায় যে ভাবে তৃণমূল ক্ষমতায় এল, সে বিষয়টি আমরা উপনির্বাচনের আগে মানুষের সামনে তুলে ধরব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন