পাঁচ দিন পরেও পাতা ঝরা পুরোপুরি বন্ধ হল না বাদুড়িয়ার ফতুল্যপুর গ্রামে। কেন গাছের কাঁচা পাতা ঝরছে, কেনই বা পুড়ে গেল বিঘার পর বিঘা পাট, ধান, সবজি— তা জানতে বিজ্ঞানীদের আসা-যাওয়ার বিরাম নেই। কিন্তু ফসলের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভাবাচ্ছে গ্রামবাসীদের।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, “কেন এমন হল, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করছেন ঠিকই। কিন্তু আমাদের ফসলের যে ক্ষতি হল, তা পূরণ করবে কে?” ফসলের ক্ষতি পূরণ হবে কী করে, তা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা। গ্রামের বাসিন্দা হানিফ সর্দার বলেন,‘‘অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ১৮ কাঠা জমিতে পাট ও ধান চাষ করে ছিলাম। হটাৎ একটা ধোাঁয়ার কুন্ডলী এসে সব শেষ করে দিয়েছে। সরকারি সাহায্য না পেলে পরিবার নিয়ে তো পথে বসার জোগাড় হয়েছে।’’ গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল, আব্দুর রসিদ বলেন, ‘‘এখানকার গরিব মানুষ অনেক কষ্ট করে চড়া সুদে ঋ
ণ নিয়ে চাষ করছিলেন। এমন ঘটনায় ফসল শেষ। কী ভাবে এই ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে, আমরা জানি না। যে সব ফসলের এখনও ক্ষতি হয়নি, তা কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব, তা নিয়েও কেউ কথা বলছেন না।”
সোমবারের পর মঙ্গলবারেও গ্রামে এসেছিলেন রাজ্য দূষন নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা সারা দিন বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে জল, মাটি এবং ঝরে যাওয়া কাঁচা পাতা পরীক্ষা করেন। শ্বাসের মধ্যে দিয়ে মানুষের শরীরে কোনও বিষাক্ত গ্যাস ঢুকেছে কিনা, তাও দেখেন। বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকেও অধ্যাপক এবং ছাত্রছাত্রীরা এসেছিলেন পাতা ঝরার রহস্য উদঘাটনে। সকলেই নমুনা সংগ্রহ করেন। সকলকেই এমন ঘটনা অবাক করেছে। বুধবারও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সিনিয়র বিজ্ঞানী প্রবীর বারুই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন। বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে বাতাসে দূষণের মাত্রাও পরীক্ষা করা হয়। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের ক্ষতিপূরণ নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় জটলা। ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব নিয়ে ব্যস্ত সকলে।
ইতিমধ্যে কী কারণে এমন ঘটনা, তার কিনারা হওয়ার আগেই একটি ইট ভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারানোর ভয়ে উদ্বিগ্ন অনেক গ্রামবাসীই। তাঁদের বক্তব্য, “গ্রামে তো তিন বছরের উপর ইটভাটার ব্যবসা শুরু হয়েছে। আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি।” তাঁদের আশঙ্কা, ইট ভাটার দোহাই দিয়ে সরকারি সাহায্য থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হবে না তো?
ব্লক ত্রান দফতরের আধিকারিক গৌরগোপাল নাথ বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে ১২ হেকটর সবজি, ২০ হেকটর পাট এবং ৬ হেকটর ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা ইতিমধ্যে পদস্থ কর্তাদের রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’’ বাদুড়িয়ার বিডিও তারক মণ্ডল বলেন,‘‘ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জেলা স্তরে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সাহায্য আসলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।’’