সন্ধ্যা তখন প্রায় পৌনে ৬টা।
গোপালনগর থানার সুন্দরপুর মোড় থেকে এক ব্যক্তি হেঁটে খাবরাপোতার দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাত্ জনা পনেরোর একটি দুষ্কৃতী দল তাঁকে ঘিরে ফেলে। কাছ থেকেই মাথায় গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি।
থমকে যায় রাস্তা। সে সময়ে রাস্তা দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করছিলেন, তাঁদেরকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পাশেই একটি মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, জনা আটেক পথচারীকে ওই মাঠে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে আটকে রাখা হয়। সঙ্গে চলে খুনের হুমকি। এরপর শূন্যে গুলি চালাতে চালাতে দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ঠিক যেন হিন্দি সিনেমা!
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবারের এই ঘটনায় আহত ব্যক্তির নাম ইউনুস মণ্ডল। বাড়ি খাবরাপোতায়। তিনি তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি শাসক দলের। গুলিতে জখম হয়েছেন সুখরঞ্জন বিশ্বাস নামে আরও এক ব্যক্তি। তাঁর পুরো পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে তার কোনও যোগ আছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ইঞ্জিনভ্যানে চাপিয়ে দু’জনকেই নিয়ে যান বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। দু’জনকেই চিকিত্সকেরা কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন। ইউনুসকে নিয়ে দলের কর্মীরা রাতেই নিয়ে যান কলকাতায়। তবে সুখরঞ্জনের চিকিত্সা চলছে বনগাঁতেই। এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “হঠাত্ গুলি চালানোর কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাসি চলছে।” পুলিশের অনুমান, পাশের এলাকা মোল্লাহাটি থেকে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু কেন তারা হামলা চালাল, তা স্পষ্ট নয়।
এ দিকে, এ দিনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থলে আসেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের বিশ্বজিত্ দাস এবং গঙ্গানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাফর আলি মণ্ডল। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন বিশ্বজিত্বাবু। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা দাবি হল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি-র জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত বলেন, “বিজেপি কখনই দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দেয় না। তৃণমূল এখন বিজেপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে। এই কারণে বিজেপি-র নামে মিথ্যা দোষারোপ করছে।” সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্যই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।