চাল থেকে শিলা, কম্বলে মাথা ঢাকলেন গ্রামবাসী

চারদিকে শুধু বরফের চাঁই। কোনওটার ওজন আড়াইশো, কোনওটা বা আটশো গ্রাম। পাঁচ কেজি ওজনের বরফের চাঁইও তুলে দেখাচ্ছিলেন গ্রামবাসী। বুধবার রাতের কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টিতে উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকা বাগদার বয়রা এবং বাগদা পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ গ্রামই যেন ‘বরফের দেশ’!

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

বাগদায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম। বরফের চাঁই পড়ে ভেঙে গিয়েছে বহু বাড়ির চাল।

চারদিকে শুধু বরফের চাঁই।

Advertisement

কোনওটার ওজন আড়াইশো, কোনওটা বা আটশো গ্রাম। পাঁচ কেজি ওজনের বরফের চাঁইও তুলে দেখাচ্ছিলেন গ্রামবাসী।

বুধবার রাতের কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টিতে উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকা বাগদার বয়রা এবং বাগদা পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ গ্রামই যেন ‘বরফের দেশ’!

Advertisement

গ্রামবাসীরা বলছিলেন, এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের আগে হয়নি। বাড়ির টিল-টালির চাল ফুটো করে পড়েছে বড় বড় শিলা। মাথা লেপ-কম্বলে ঢেকে অনেকে শুধু ইষ্টনাম জপে রাত কাটিয়েছেন। ছোটদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয় খাটের তলায়। শিলাবৃষ্টিতে ঝরে গিয়েছে অধিকাংশ গাছের পাতা। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ফসল।

বিডিও মালবিকা খাটুয়া জানিয়েছেন, এক রাতের শিলাবৃষ্টিতে ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের বাড়িঘর ভেঙেছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। দুর্গতদের জন্য দু’টি স্কুল এবং একটি আশ্রমে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের জন্য ত্রিপলও বিলি করা হচ্ছে। কোনও রকম পূর্বাভাস ছাড়াই বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ কয়েক পশলা বৃষ্টি দেখে গ্রামবাসীদের অনেকেই খুশি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, আচমকা বেড়ে যাওয়া গরম কিছুটা কমবে। বসন্ত উপভোগ্য হবে। কিন্তু তার পর সন্ধ্যা থেকে প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত চার দফায় ওই শিলাবৃষ্টি, ঘুম কেড়ে নেয় গ্রামবাসীর। পাঁচবেড়িয়া, মেহেরানি, লক, লক্ষ্মীপুর, কুলনন্দপুর-সহ পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় সর্বত্রই পড়তে থাকে বড় বড় শিলা। একই দৃশ্য দেখা যায় বাগদা পঞ্চায়েতের পাটকেলগাছা, মশ্যমপুর, সোলুআরদারি, মামাভাগিনা, মধুপুরের মতো গ্রামগুলিরও।

রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে পাতা।

বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়ক থেকে গ্রামের ভিতরের রাস্তা, বাড়ির উঠোন, খেত সব ভরে গিয়েছে বরফের টুকরোতে। অনেক বাড়িরই চাল আর আস্ত নেই। বেশির ভাগ গাছেরই পাতা ঝরে গিয়েছে। খেতের পর খেতের কলা, পেঁপে, ধান, পটল, সর্ষে, ডাল কীসের যে ক্ষতি হয়নি, তার বলতে পারছিলেন না গ্রামবাসীরা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাঁচবেড়িয়া। বহু মানুষকেই দেখা যায় খোলা আকাশের নীচে দিনযাপনের তোড়জোড় করছেন। সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় আশপাশে টহল দিচ্ছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। গ্রামবাসীদের কথায়, আতঙ্কের রাতটা যেন কাটতেই চাইছিল না। ওই রাতেই তাঁদের অনেকে পাকা বাড়ি বা স্কুলে আশ্রয় নেন। শিলার ঘায়ে এক বৃদ্ধ জখম হন। বয়রা বাজারে যাওয়ার পথে দেখা গেল দুর্গতেরা রাস্তায় জড়ো হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আশালতা বাগচী, উর্মিলা বিশ্বাসরা বলেন, “ঘরের টিন-টালি বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।” প্রেমানন্দ বিশ্বাস ও উন্নতি বিশ্বাস নামে আরও দুই গ্রামবাসীর কথায়, “ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলাম।” হরবিলাস বিশ্বাস তার পোষা টিয়া পাখি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এক জওয়ান বলেন, “শিলা এমনই তেজে পড়ছিল যে রাস্তা ছেড়ে আমাদের ছাউনিতে ফিরে যেতে হল।”

বৃহস্পতিবার বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। তিনি শম্পাদেবীকে ভাঙা বাড়িগুলি অবিলম্বে মেরামতির নির্দেশ দেন।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement