তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীদের দিনের পর দিন যৌন হেনস্থা করে আসছিলেন স্কুলেরই এক শিক্ষক। তা জানাজানি হওয়ার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক, গ্রামশিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং অভিভাবকরা মিলে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে আর স্কুলে রাখা হবে না। ওই তিন ছাত্রীর অভিভাবকরা অবশ্য থানায় বিষয়টি জানাতে রাজি হননি।
সাগর ব্লকের ফুলবাড়ি গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ছাত্রীদের ক্লাসের পরে ঘরে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর ভাবে স্পর্শ করতেন। এদের মধ্যে এক ছাত্রী স্কুলে যেতে না-চাওয়ায়, জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানতে পারেন অভিভাবকরা। এরপর ওই স্কুলেরই এক শিক্ষিকাকে তাঁরা বিষয়টি জানান। গত ২০ অগস্ট আপত্তিকর অবস্থায় এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁকে ধরে ফেলে উত্তেজিত অভিভাবকরা মারধরও করেন ওই শিক্ষককে।
ঘটনার পরদিন গ্রামশিক্ষা কমিটি, অভিভাবক এবং প্রধানশিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষকরা একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, ওই শিক্ষককে আর স্কুলে রাখা যাবে না। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলি লিপিবদ্ধও করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই শিক্ষককে যত শীঘ্র সম্ভব বদলি করা হবে। বিষয়টি স্কুল পরিদর্শককেও জানানো হয়েছে। এখনও বদলির নির্দেশ আসেনি। তবে তারপর থেকে আর স্কুলে আসছেন না ওই শিক্ষক।
শাস্তিযোগ্য এই অপরাধের ঘটনা কেন পুলিশে জানানো হল না? সেদিনের সেই বৈঠকে হাজির স্কুলের এক অভিভাবক জানান, “আমরা ওই ছাত্রীদের বাবা-মায়েদের বলেছিলাম, বিষয়টি থানায় জানাতে। কিন্তু তারা পারিবারিক সম্মানের কথা মাথায় রেখে তা করতে নারাজ।” ওই শিক্ষক ওই গ্রামেরই ছেলে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। ছাত্রীরা প্রচণ্ড ভয়ে রয়েছে। ওই শিক্ষককে আর স্কুলে রাখা যাবে না বলে ওই বৈঠকে সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা গ্রামশিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তাপসী দাস বলেন, “সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই শিক্ষক সাগর ব্লকের কোনও স্কুলে যেন পড়ানোর সুযোগ না পান তা দেখতে হবে।” অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে ফোনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টির জন্য ওই বৈঠকে সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজি আছি। তারপরেও সমস্যা না মিটলে আমি অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়ব।” অভিভাবকরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কোনও রকম ক্ষতিপূরণ নেবেন না। ওই শিক্ষককে আর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হবে না।