সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তারমধ্যেই ছেলে মাধ্যমিকে সব বিষয়ে লেটার সহ ৬৫৪ নম্বর পেয়ে বাবা-মায়ের চোখের ঘুম উধাও হয়ে যাওয়ার অবস্থা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির চুপড়িঝাড়া পঞ্চায়েতে ঘটিহারানিয়া গ্রামের রহমতুল্লা মোল্লা এ বারে ঘটিহারানিয়া হাইস্কুলের সেরা নম্বর পেয়েছে। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে কী ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে ছেলেটি, এখন সেই চিন্তায় রাতে দু’চোখের পাতা এক করার মতো অবস্থা নেই। তবে যে কোন ভাবেই হোক, নরেন্দ্রপুরে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দু’চোখে।
রহমতুল্লার বাবা হোসেন মোল্লা গত কয়েক বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছেন। তার মধ্যেও তিন সন্তানের মধ্যে বড় রহমতুল্লাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। সংসারের খরচ জোগাতে দিনমজুরের কাজ করেন তিনি। এক চিলতে মাটির দেওয়ালের খড়ের ছাউনির ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও সারাক্ষণই লো ভোল্টেজ। বাধ্য হয়ে কেরোসিনের কুপির আলোয় পড়াশোনা চালায় ছেলেটি। পাড়ার এক দাদা কিছুটা পড়া দেখিয়ে দিত তাকে। ভাল ফলাফলের পিছনে ‘উদয় স্যার’ সহ সব শিক্ষকদের অবদান আছে বলে জানায় রহমতুল্লা।
রহমতুল্লা বলে, ‘‘গ্রামের অনেক গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যান। আমি ভাল চিকিৎসক হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’
বাবা হোসেনের কথায়, ‘‘চরম অভাবের সংসারে আমাকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। সেই যন্ত্রণা মেটাতেই ছেলেকে অনেক দূর পর্যন্ত পড়াতে চাই। কিন্তু বাদ সেধেছে সেই আর্থিক অবস্থা। কী যে করি, ভেবে পাচ্ছি না।’’ ঘটিহারানিয়া হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক উদয় মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এমন প্রতিভাবান ছাত্র এই স্কুলে আসেনি। চেষ্টা করব, ওক যতটা পারি সাহায্যে করতে।’’