হালিশহর

জাহাজ শিল্পের প্রাচীন কেন্দ্রে গড়ে ওঠেনি নতুন বড় শিল্প

পুর পরিষেবা, নগর জীবনে আধুনিকতার ছোঁওয়া, সংস্কৃতির বিকাশ হালিশহরকে যতটা সামনে এগোতে সাহায্য করেছে, ততটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে শিল্প। একাদশ শতকে যে শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল জাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে, বর্তমানে সেই শহরে মাথা উঁচু করে থাকার মতো শিল্প এখনও মাত্র একটি।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য ও মৌ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১০
Share:

চালুই হল না প্রস্তাবিত কাঁচরাপাড়া কোচ ফ্যাক্টরি। —নিজস্ব চিত্র।

পুর পরিষেবা, নগর জীবনে আধুনিকতার ছোঁওয়া, সংস্কৃতির বিকাশ হালিশহরকে যতটা সামনে এগোতে সাহায্য করেছে, ততটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে শিল্প। একাদশ শতকে যে শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল জাহাজ শিল্পকে কেন্দ্র করে, বর্তমানে সেই শহরে মাথা উঁচু করে থাকার মতো শিল্প এখনও মাত্র একটি। সেটি হল, পৃথিবীর সব থেকে বড় চটকল হুকুমচাঁদ জুটমিল। এর বাইরে হালিশহরে বলার মতো কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি। গঙ্গার ধারে কাগজকলটিরও দৈন্যদশা। এ বাদে ছোটখাটো কয়েকটি প্লাস্টিক কারখানা, আয়ুর্বেদিক ওষুধের কারখানা, বাতাসা-মিছরির কারখানা ছাড়া কোনও মাঝারি মানের কারখানাও গড়ে ওঠেনি এত বছরে।

Advertisement

এক সময়ে নদীপথই হালিশহর তথা কুমারহট্টকে শিল্পতালুক করেছিল। রাজা কুমার পালের তৈরি জাহাজঘাটা ‘নৌ-বিতান’কে ঘিরে মৃৎ শিল্প, কাঁসা, শাঁখা, সোনা ও বিভিন্ন গয়না শিল্প গড়ে উঠেছিল।

কুমারহট্টে গঙ্গা ও যমুনা কাছাকাছি থাকায় মৎস্যজীবীদের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। হালিশহরের কোনা এলাকায় এখনও জেলে সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি। রানি রাসমণি নিজেও মৎস্যজীবী পরিবারের মেয়ে ছিলেন। মাছ ধরাটাকে পেশা হিসাবে এখনও অনেকে ধরে রাখলেও অন্য কুটির শিল্পগুলি হারিয়ে গিয়েছে। তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে হালিশহর পুরসভার ৪, ৫, ৬, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাতাসা তৈরি হয়। বিড়ি বাঁধার কাজের সঙ্গে যুক্ত বহু পরিবার। জরি, শোলার কাজ করেন অনেকে।

Advertisement

১৮৯৪ সালে হালিশহরে রেল স্টেশন তৈরি হয়। পাশেই কাঁচরাপাড়ায় রেল ওয়ার্কশপ ‌থাকায় হালিশহরে রেলের খালি জমিতে কোচ ফ্যাক্টরি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল ইউপিএ সরকারের সময়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন হালিশহরে রেলের কোচ ফ্যাক্টরি করার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর দু’দফায় ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী ও তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জঙ্গল পরিস্কার করা হয়। বেআইনি দখলদারি সরানো হয়। কিন্তু ওইটুকুই। তারপর সব চুপচাপ। এ দিকে রেলের কোচ ফ্যাক্টরি হলে ব্যবসা চলবে, এই আশায় লোহার জিনিসপত্র তৈরির কিছু অনুসারি শিল্পও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারাও যে যার মতো গুটিয়ে নিয়েছে।

হালিশহরের পাশেই নৈহাটিতে শ্রমিক নেত্রী সন্তোষকুমারী দেবীর বাড়ি। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনের পথিকৃৎ তিনি। কিন্তু শিল্প ও শ্রমের বিষয়ে দিশাহীন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে চালু কারখানাগুলি যেমন একের পর এক বন্ধ হয়েছে, তেমনি হালিশহরের মতো ছোট জায়গায় নতুন করে কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি।

সরকারি বা বেসরকারি তদ্বিরও হয়নি। গঙ্গার ধারে হুকুমচাঁদ জুটমিলে এখনও নিয়মিত চটের বস্তা উৎপাদন হয়। প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। মিলের সিইও সমীরকুমার চন্দ্র বলেন, “চটকলের সেই দিন আর নেই। শ্রমিকেরা নানা রকম কাজের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মিত চটকলে কাজ করতে চান না। মাঝে মধ্যেই শ্রমিক-ঘাটতি দেখা দেয়। বড় চটকল হওয়ায় নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক না এলে কাজ করানো যায় না।”

তবে নগরায়ণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন করে পর্যটন বাণিজ্যের যে ভাবনা হালিশহরের পুর প্রশাসন বা শহরবাসী ভাবছেন, তা যদি সফল হয় তবে কুমারহট্টের নৌ-বিতানের মতো আজকের হালিশহরকে ঘিরেও অনেক শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। সে দিন কুমারহট্টের মতো ব্যাপ্তির আশায় হালিশহরও তাকিয়ে থাকবে।

(শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর হালিশহর’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান:
www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগ,
জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন