সকাল ৬টা। কুয়াশায় ঢাকা পথঘাট। তারই মধ্যে পিছনে বড় ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুই যুবক। আঙুল দিয়ে চিহ্নিত করছেন বসিরহাটের ইছামতী সেতু, কখনও মহকুমাশাসকের বাংলো। সংশোধনাগারের সামনেও ঘুরে দেখলেন তাঁরা।
প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন কয়েকজন। দুই যুবকের আচরণ তাঁদের ভাল ঠেকেনি। খবর দেওয়া হয় থানায়। আইসি গৌতম মিত্র সাদা পোশাকে দুই যুবকের পিছু নেন। পিছন থেকে গোপনে দুই যুবকের আচরণ ভিডিও রেকর্ডিং করেন গৌতমবাবু। বসিরহাট স্টেডিয়াম ঘুরে দেখার পরে দুই যুবক যখন বসিরহাট স্কুলের সামনে, তখন পুলিশ গিয়ে তাঁদের আটক করে।
থানায় এনে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ জানিয়েছে, এক যুবকের জম্মুর বাসিরনগর এলাকায়। অন্যজনও জম্মুর ভারতীনগরের বাসিন্দা। কী কারণে তাঁরা বসিরহাটের নানা এলাকা ঘুরে দেখছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। দীর্ঘ জেরার পরে দু’জনকে গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এক যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, বছর তিনেক আগে তিনি মায়ানমারে থাকতেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসেন। কিছু দিন সেখানে থাকার পর অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই শ্যালিকা। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। দেড় মাস জেলে থাকার পরে ছাড়া পান ওই যুবক। সে সময়ে তিনি জম্মুতে ফিরে যান। কিন্তু তাঁর দুই শ্যালিকা কলকাতার ‘সংলাপ’ নামে একটি হোমে ছিল। তাঁদেরকে নিয়ে যেতেই ওই যুবক ফের বসিরহাটে এসেছেন বলে তাঁর দাবি। ভাল আইনজীবী খুঁজতেই নাকি এসেছেন এই এলাকায়। কিন্তু কেন উকিল খুঁজতে সাতসকালে দু’জন বসিরহাটের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তা স্পষ্ট নয় তদন্তকারী অফিসারদের কাছে।
‘সংলাপ’-এর সাধারণ সম্পাদক তপতী ভৌমিক বলেন, ‘‘তিন বছর আগে আমরা জুভেনাইল কোর্ট থেকে দুই কিশোরীকে নিয়ে এসেছিলাম। ওই যুবক যে নাম বলছেন, সেই নামের দু’টি মেয়ে আমাদের কাছে আছে, এটা ঠিক। কিন্তু তারাই ওই যুবকের শ্যালিকা কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’
অন্য দিকে, আর এক যুবকের বক্তব্য, তিনি আগে কখনও এ রাজ্যে আসেননি। গত তিন মাস ধরে তাঁর এক ভাই নিখোঁজ। কলকাতা থেকে একটা ফোনে ভাই তাকে উদ্ধারের জন্য বলায়, সঙ্গী ওই যুবককে নিয়ে তিনি বসিরহাটে এসেছেন।
গোয়েন্দাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। দু’জনের কাছ থেকে পাওয়া বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, জম্মুর কয়েকটি সংস্থার নথি, বসিরহাটের এক আইনজীবীর ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে।