ঢুকছে বহিরাগত, জেনেও ঢিলেঢালা রাতের বসিরহাট

বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচন নিয়ে এখন সরগরম এলাকা। বহিরাগত গুন্ডা-মস্তানদের ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন দলের। যে কোনও মুহূর্তে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে, তা বিলক্ষণ জানে পুলিশ-প্রশাসনও। তা সত্ত্বেও এতটুকুও বদলায়নি রাতের বসিরহাট। চলছে গাড়ি ভর্তি গরু-মোষ পাচার। মাতৃসদনের পাশে, টাউনহল এলাকায়, বদরতলা, হরিশপুর, শ্মশানঘাট, ভ্যাবলা-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকাতে রমরমিয়ে চলছে চুল্লু-জুয়ার ঠেক।

Advertisement

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৭
Share:

২টো। ইছামতী সেতুর উপরে বন্ধ বেশির ভাগ আলো।

বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচন নিয়ে এখন সরগরম এলাকা। বহিরাগত গুন্ডা-মস্তানদের ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন দলের। যে কোনও মুহূর্তে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে, তা বিলক্ষণ জানে পুলিশ-প্রশাসনও। তা সত্ত্বেও এতটুকুও বদলায়নি রাতের বসিরহাট। চলছে গাড়ি ভর্তি গরু-মোষ পাচার। মাতৃসদনের পাশে, টাউনহল এলাকায়, বদরতলা, হরিশপুর, শ্মশানঘাট, ভ্যাবলা-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকাতে রমরমিয়ে চলছে চুল্লু-জুয়ার ঠেক।

Advertisement

সীমান্ত-ঘেঁষা এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এ পারে এসে নানা অপরাধ ঘটিয়ে আবার সীমান্ত পেরিয়ে ও দেশে ঢুকে যায় বলে অভিযোগ বহু দিনের। কিন্তু তারপরেও শহরে রাতের নিরাপত্তা এখনও বেশ ঢিলেঢালা। গত কয়েক মাস ধরে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে বসিরহাট শহরে। বিশেষত, বেশি রাতে যাঁরা ট্রেনে-বাসে করে পৌঁছন, তাঁদের মনে নানা ভয় ধরেছে। মোটর বাইকে ধেয়ে আসা দুষ্কৃতীরা নিমেষের মধ্যে ব্যাগ, হার, দুল ছিনতাই করে পালাচ্ছে। পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েও ফল মিলছে না বলে অভিযোগ।

এই তো কয়েক দিন আগে এক শিক্ষক দম্পত্তি ছেলের সঙ্গে ভিনরাজ্য থেকে দেখা করে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন। বসিরহাট স্টেশনে নেমে এসএন মজুমদার রোড দিয়ে ভ্যান রিকশায় যাওয়ার সময়ে মুন্সি বাগানের কাছে মোটর বাইকে চড়ে দুই দুষ্কৃতী তাঁদের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। ব্যাগ ধরে টানাটানির সময়ে মহিলা ভ্যান থেকে ছিটকে রাস্তার পড়ে আহত হন। একই রকম বিপদে পড়তে হয় এক পুলিশকর্মীর পরিবারকে। কয়েক দিন আগে বিয়েবাড়ি থেকে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা।

Advertisement

রাত সওয়া ১১টা নাগাদ ভ্যাবলা স্টেশনে নেমে ভ্যান রিকশায় ইটিন্ডা ধরে মৈত্রবাগানের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। বসিরহাট কলেজ পার হয়ে কিছুটা এগোনোর পরে একটি মোটর বাইকে আসা দুই যুবক মহিলার থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। এ ক্ষেত্রেও ভ্যান থেকে পড়ে আহত হন ওই মহিলা। দু’টি ক্ষেত্রেই ব্যাগে থাকা লক্ষাধিক টাকার গয়না, মোবাইল, জরুরি কাগজপত্র খোয়া যায়। ওই পুলিশকর্মীর পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ করা হলে কেউ ধরা তো পড়েইনি, উল্টে দুষ্কৃতীরা পুলিশকর্মীর মেয়েকে হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ।

সব মিলিয়ে বদলায়নি বসিরহাটের আইন-শৃঙ্খলার চিত্র। রাতের শহরের অবস্থাও তথৈবচ।

রাতে বেরিয়ে দেখা গেল, ইছামতী সেতুর উপরে থাকা ৫০টি আলোর মধ্যে মাত্র ৫টি আলো জ্বলছে। মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে দিয়ে ইছামতী সেতুতে উঠে নদী পার না হয়ে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার রাস্তায় থাকা সব ক’টি আলো বন্ধ। একই ভাবে নদীর অন্য পারে সংগ্রামপুর বাসস্টান্ডের দিক থেকে সেতুতে উঠে ওল্ড সাতক্ষিরা রোড। বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে যাওয়ার এই রাস্তাতে আলোকস্তম্ভ থাকলেও তা পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে। কেবল মাত্র সেতুর মাঝামাঝি অংশে গোটা পাঁচেক বাজি জ্বলছে। রাত ১২টার সময়ে সেতু থেকে শুরু করে মহকুমাশাসকের দফতর, বাংলো, আদালত, সংশোধনাগার-সহ আশপাশের এলাকাতে চোখে পড়ল না কোনও পুলিশ কর্মী।

বসিরহাট এবং ভ্যাবলা স্টেশনেও দেখা মেলেনি রেল পুলিশের। ত্রিমোহনি, চৌমাথা এবং টাউনহল এলাকাও সুনসান। এরই মধ্যে স্টেশন রাস্তা বলে পরিচিত এসএন মজুমদার এবং আরএন মজুমদার রাস্তা দু’টি এতটাই বেহাল যে পিচ ও পাথর উঠে বড় বড় ডোবা তৈরি হয়েছে। সেখানে জল জমে থাকায় রাতের আলোয় গভীরতা বোঝা অসম্ভব। ত্রিমোহনি এলাকায় টাকি এবং ইটিন্ডা রাস্তা দু’টিরও হাল একই রকম। কার্যত, পায়ে হাঁটারও উপায় নেই।

এরই মধ্যে বসিরহাট স্টেশনে থাকা রেল পুলিশকর্মীদের মশারির মধ্যে ঢুকতে দেখা গেল। এক জন বললেন, “প্ল্যাটফর্মে কোনও অসুবিধা হলে খবর পেলে চলে যাব। অন্য জনের কথায়, “এই তো সবে ডিউটি সেরে এলাম।” শহরের মধ্যে থাকা প্রায় কুড়িটি এটিএম কাউন্টারের সামনে গিয়েও দেখা গেল নিরাপত্তাহীনতার চিত্র। কোনও নৈশপ্রহরী চোখে পড়ল না।

সুনসান ইছামতী সেতুতেও কোনও টহলদার নেই। সংগ্রামপুরের দিকে ত্রিপল খাটিয়ে বাল্ব জ্বেলে বসে ছিল চারটি অল্পবয়সী ছেলে। তারা জানায়, গাড়ির হিসেব রাখতে খড়দার একটি সংস্থা থেকে এসেছে। সঙ্কেত পরামানিক, শুভম হাজরা, নিত্যানন্দ কোলে, মানস হাজরা নামে ওই চার জন জানায়, কাজ সামলাতে দু’জন থাকলেই চলে। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবেই চার জন এক সঙ্গে থাকে।

এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, ২৬৭ স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকার মধ্যে একটি মাত্র বসিরহাট থানা। পাহারার জন্য মাত্র ২-৩টে গাড়ি। প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশকর্মী অনেক কম। এই থানার মধ্যে আবার পড়ে সীমান্ত এলাকা, পুরসভা, দু’টি ব্লক, দু’টি স্টেশন, স্কুল-কলেজ, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা না ঘটলে সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের রাত পাহারার কাজে লাগানো হয় না বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দিনে ও রাতে পুলিশি টহল চলে নিয়মিত ভাবে। কোনও একটা সময়ে যদি টহল ভ্যান দেখা না যায়, তার মানে এই নয় যে টহলদারি চলছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন