নাবালিকার ফোন পেয়ে বিয়ে রুখল প্রশাসন

সন্ধ্যা তখন ৭টা। হিঙ্গলগঞ্জের রমেন্দ্রনগর গ্রামের বাড়িতে বেজে উঠল সানাই। আলোয় ঝলমল করছে বাড়ি। ‘বর এসেছে’ বলে শুরু হয়ে গেল মহিলাদের হুড়োহুড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০১:২০
Share:

সন্ধ্যা তখন ৭টা। হিঙ্গলগঞ্জের রমেন্দ্রনগর গ্রামের বাড়িতে বেজে উঠল সানাই। আলোয় ঝলমল করছে বাড়ি। ‘বর এসেছে’ বলে শুরু হয়ে গেল মহিলাদের হুড়োহুড়ি। শাঁখ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে বরকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল। নিমন্ত্রিতদের জন্য খাবারের আয়োজনও শেষ। চোদ্দো বছরের কনে তখন বসতে চলেছে বিয়ের পিড়িতে। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বিয়েবাড়িতে হাজির হলেন বিডিও বিশ্বজিৎ বসু এবং ওসি শঙ্করনারায়ণ সাহা। নাবলিকা কনের বিয়েতে অমত আছে জেনে বিয়ে আটকাতে হাজির তাঁরা।

Advertisement

নিমেষে বদলে গেল বিয়েবাড়ির পরিবেশ। বিয়েতে রাজি ছিল না মেয়েটি। সে কারণে তার বান্ধবীকে দিয়ে চাইল্ড লাইনে ফোন করায়। এরপরেই বিয়েবাড়িতে চাইল্ড লাইনের লোকজন-সহ প্রশাসন ও পুলিশ আসে। পুলিশ দেখে ভয়ে কেউ কেউ সব ছেড়ে বিয়েবাড়ি থেকে পালায়। সদ্য বিয়ের মন্ত্র পাঠ করা শুরু করেছিলেন পুরোহিত। তিনিও পালান। সোমবার রাতে ওই পাত্রীর বিয়ে হচ্ছিল এলাকারই সেরেরআটি গ্রামের বাসিন্দা তিরিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির সঙ্গে। বিয়ে বন্ধ করা নিয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত বাদনুবাদ চলে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাবালিকা বিয়ে করা অপরাধ বলে জানানো হয় পাত্রপক্ষকে। গ্রেফতারও হতে পারে পাত্র। এ কথা জেনে পাত্রের বাবা মেয়ে সাবালিকা হয়ে মত দিলে তবেই এই বিয়ে হবে বলে মুচলেকা দেন। এরপরেই পুলিশ সেখান থেকে ফেরে। বরও বাড়ি ফিরে যায়।

এ বিষয়ে বিডিও বিশ্বজিৎ বসু বলেন, ‘‘নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করার জন্য প্রশাসন সব সময়ে তৎপর। তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে রমেন্দ্রনগর গ্রামে অনুষ্ঠান বাড়িতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে এই বিয়ে বন্ধ করি।’’ বাল্যবিবাহ বন্ধের বিষয়ে সুন্দরবন এলাকায় প্রচার শুরু হয়েছে। গত ছ’মাসে এই নিয়ে সাতজন কিশোরীর বিয়ে বন্ধ করা হল বলে বি়ডিও জানান।

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জ নাগরিক কমিটির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ এবং দেবপ্রসাদ ঘোষ জানান, বাল্যবিবাহ বন্ধের বিষয়ে নানা ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানও করা হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ খুবই দরিদ্র পরিবার হওয়ায় কম বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে চান। এই সুযোগ নিয়ে অনেক সময়ে দেখা যায়, মেয়ে পাচারও হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন