বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে এক মহিলাকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে জিনিসপত্র পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে গণধর্ষণের অভিযোগে এক আইনজীবী এবং এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
শনিবার রাত ৮টা নাগাদ দেগঙ্গার মুরগিহাটা এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির একটি ঘর থেকে ভেসে আসছিল ওই মহিলার কান্না। তা শুনে বাজার-ফেরত লোকজনের সন্দেহ হয়। তাঁরা ঘরে ঢোকেন। ওই মহিলার উপরে নির্যাতন হয়েছে বুঝতে পেরে সেখানে থাকা দু’জনকে ধরে উত্তমমধ্যম দেন। এক অভিযুক্ত জানলা দিয়ে পালায়। খবর পেয়ে পুলিশ দিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় মহিলাকে।
রবিবার ওই মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয় বারাসত হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে আসলামুর জামান মণ্ডল ওরফে সাহেব পেশায় আইনজীবী। অন্য জন হাসানুর মোল্লা ওরফে হাঁসা ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাঙ্ককর্মী রাজিবুল মোল্লা পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। অভিযুক্তেরা বারাসত এলাকার বাসিন্দা। মহিলার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃতদের রবিবার বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের এক দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আসলামুরের আইনজীবী সমর ঘোষালের দাবি, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মাস আগে বসিরহাটের পাইকপাড়ার চণ্ডীগড়ি গ্রামের বছর কুড়ির ওই মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় দেগঙ্গার আমুলিয়ার দক্ষিণবরুণী গ্রামের এক চাষির। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ায় দিনকয়েক আগে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। মহিলা বাপেরবাড়িতে ফিরে যান। শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের জিনিসপত্র ফেরত চান।
পুলিশের কাছে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, রাজিবুল তাঁর শ্বশুরবাড়ির ঘনিষ্ঠ। শনিবার সকালে রাজিবুলই তাঁকে ফোনে জানায়, মুরগিহাটায় একটি বাড়িতে আসলামুরের সামনে জিনিসপত্র দেওয়া হবে। রাজিবুলের কথামতো তিনি ওই দিন সন্ধ্যার ট্রেনে লেবুতলা স্টেশনে যান। সেখান থেকে রাজিবুলই তাঁকে মুরগিহাটায় ওই বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ছিল আসলামুর এবং হাসানুর। সেখানে খুনের হুমকি দিয়ে ওই তিন জন তাঁকে ধর্ষণ করে।
নির্যাতিতার মায়ের সন্দেহ, জিনিসপত্র ফেরত না দেওয়ার জন্য জামাই-ই ওই পরিকল্পনা করে। মহিলার স্বামী সে কথা মানেননি। শনিবার রাতে দেগঙ্গা থানার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর দাবি, “অসুস্থ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আমাকে ঠকানো হয়েছিল বলে তালাক দিয়েছিলাম। ওঁরা গয়না চাওয়ায় আইনজীবীর সামনে রাজিবুলের পরামর্শ মতো ফেরতও দিতে চেয়েছিলাম। স্ত্রী লেবুতলা স্টেশনে আসছে শুনে আমি জিনিসপত্র আনতে যাই। পরে শুনি ওই কাণ্ড। ঘটনার সঙ্গে আমি কোনও ভাবেই যুক্ত নই।”
পুলিশ জানায়, ঘটনাটির সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।