নিহতের ফোন থেকে মেসেজ, ধৃত যুবক

গত ২৭ নভেম্বর রাতে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার দত্তপুকুর স্টেশনের কাছে রেললাইনের পাশ থেকে এক কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়না-তদন্তে জানা যায়, শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে ওই কিশোরকে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘোলা থানার নিউ ব্যারাকপুরের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের নাম সানি শীল। তার মোবাইলের কল-লিস্ট দেখে ও এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিউ ব্যারাকপুর থেকেই রবিন সিংহ ওরফে শিব নামে ২২ বছরের ওই যুবককে ধরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪১
Share:

ময়না-তদন্ত বলছে, খুন হয়েছে রাত ৮টায়। আর তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিহত কিশোরের মোবাইল থেকে পরবর্তী এক ঘণ্টা বান্ধবীর সঙ্গে এসএমএসে কথাবার্তা হয়েছে। সন্দেহ দানা বেঁধেছিল সেখান থেকেই। সেই সূত্র ধরেই খুনের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ।

Advertisement

গত ২৭ নভেম্বর রাতে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার দত্তপুকুর স্টেশনের কাছে রেললাইনের পাশ থেকে এক কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়না-তদন্তে জানা যায়, শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে ওই কিশোরকে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘোলা থানার নিউ ব্যারাকপুরের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের নাম সানি শীল। তার মোবাইলের কল-লিস্ট দেখে ও এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিউ ব্যারাকপুর থেকেই রবিন সিংহ ওরফে শিব নামে ২২ বছরের ওই যুবককে ধরে।

জেরায় রবিন খুনের দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, জেরায় রবিন জানিয়েছে, এলাকারই ছেলে সানি তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলত। তাই সন্দেহের বশে ওই ছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করে সে। এখানেই শেষ নয়, পুলিশের দাবি, খুনের পরে সানির মোবাইল থেকে নিজের বান্ধবীর মোবাইলে এসএমএস করে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা চালায় রবিন। জানার চেষ্টা করে দু’জনের সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল। পরে সন্দেহ ঘুচে যেতে রাতেই দেখা করে বান্ধবীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় রবিন। ধৃতের কার্যকলাপ দেখে অবাক পুলিশকর্তারাও। সোমবার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “রবিনের মোবাইলের কল-লিস্ট থেকেও তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। এই খুনের ঘটনায় রবিনকে যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে, সে জন্য একের পর এক কৌশলও নিয়েছে সে।”

Advertisement

কেমন কৌশল?

পুলিশ জানায়, রাত হয়ে যাওয়ায় সানি কোথায় তা জানতে চেয়ে বারবার তার মোবাইলে ফোন করতে থাকেন বাড়ির লোকেরা। পুলিশের দাবি, খুনের পরে সানির মোবাইল থেকে তার বাবার মোবাইলেও এসএমএস করে রবিন। সানির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম জানিয়ে লেখা হয়, ‘বাবা, আমি ওর সঙ্গে আছি। ফিরতে রাত হবে। চিন্তা কোরো না।’ ফলে ওই কিশোরের দেহ উদ্ধারের পরে সেই এসএমএস দেখে ওই বন্ধুর উপরেই প্রথম সন্দেহ হয় পরিবারের। সন্দেহ করে পুলিশও। পরে সানির মোবাইল থেকে মেয়েটির নম্বর পেয়ে সব কিছু প্রকাশ হয়ে পড়ে।

পুলিশের দাবি, জেরায় রবিন জানিয়েছে, নিউ ব্যারাকপুরেই একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রবিনের। সম্প্রতি সেই মেয়েটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় সানির। সেই রাগেই তাকে খুন করার পরিকল্পনা করে রবিন। স্থানীয় একটি সংস্থায় ক্যাটারিংয়ের কর্মী রবিন আগে থেকেই দত্তপুকুরের রেললাইনের পাশে সুনসান এলাকাটা দেখে এসেছিল। ২৭ নভেম্বর বান্ধবীর জন্মদিনের রাতে অনেক কিছু তথ্য দেবে জানিয়ে সানিকে বাড়ি থেকে ডেকে দত্তপুকুরে নিয়ে যায় ওই যুবক। পুলিশের দাবি, সেখানেই তাকে গলা টিপে খুন করে বলে জানিয়েছে রবিন।

পুলিশ জানায়, খুনের পরে রবিন এক দিকে নিজের ফোনে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে থাকে। আর সানির ফোন থেকে বান্ধবীর অন্য নম্বরে সানির নাম করেই এসএমএস পাঠাতে থাকে। কমপক্ষে ৫০টি এসএমএস করে সে। কিন্তু সন্দেহ ঘুচে যাওয়ায় সে ফুল, ক্যাডবেরি নিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে জন্মদিনের শুভেচ্ছো জানায়। পুলিশের কাছে এ সব কথা খুলে বলেছে মেয়েটিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন