নদী এখনও প্রশ্রয় দেয় প্রেমকে

ফকিরচাঁদ কলেজের পিছনে গঙ্গার ধারে বসেছিল সৈকত ও সুছন্দা। সৈকত কলেজের গণ্ডি পেরোলেও তাঁর হার্টথ্রব এখনও তা পেরোয়নি। এর এই নদীর ধারেই কেটে গিয়েছে ভ্যালেনটাইনস্ ডে। কিন্তু এবার একটু অন্যরকমভাবে এই দিনটিকে কাটাতে চান তাঁরা। সৈকত বলেন, “এবার কলকাতার সাউথ সিটিতে এসে চুটিয়ে আড্ডা দেব বলে ঠিক করেছি।”

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৪
Share:

সাক্ষী যেখানে নদী। —নিজস্ব চিত্র।

ফকিরচাঁদ কলেজের পিছনে গঙ্গার ধারে বসেছিল সৈকত ও সুছন্দা। সৈকত কলেজের গণ্ডি পেরোলেও তাঁর হার্টথ্রব এখনও তা পেরোয়নি। এর এই নদীর ধারেই কেটে গিয়েছে ভ্যালেনটাইনস্ ডে। কিন্তু এবার একটু অন্যরকমভাবে এই দিনটিকে কাটাতে চান তাঁরা। সৈকত বলেন, “এবার কলকাতার সাউথ সিটিতে এসে চুটিয়ে আড্ডা দেব বলে ঠিক করেছি।”

Advertisement

এক সময় প্রেম করতে ডায়মন্ড হারবারে আসতেন কত যুগল। কিন্তু এখন এখানে প্রেম করার জন্য মনের মতো জায়গা পাওয়া ভার, জানান এই প্রজন্মের যুগলরা। এখানে প্রেম করার জায়গা বলতে নদীর ধার, আর পোস্ট অফিসের পিছনে নদী বাঁধ। তা ছাড়া রয়েছে জেটিঘাট বা কেল্লার মাঠ। কিন্তু প্রেমিক যুগলদের কথায়, “এই সব জায়গায় সমাজবিরোধীদের ভিড় বেশি। ফলে প্রেম করতে এসে অনেক সময়ই অস্বস্তিতে পড়তে হয়।” তার উপর শহরে দেহ ব্যবসার প্রচলন বেড়েছে। এতে শহর বদনামও হয়েছে। সে কারণে জেটিঘাটের মতো জায়গায় সন্ধ্যার পর কোনও মেয়ে তাঁর প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না।

তবে শহরটা এরকম ছিল না। ষাটের দশকে এই শহরের বাসিন্দা মৃণাল হালদার কলকাতার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। কিন্তু প্রেমিকার টানে ছুটি পেলেই তিনি আসতেন ডায়মন্ড হারবারে। এসডিও অফিসের অবসরপ্রাপ্ত ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “এই শহরেই বহু জায়গায় আমরা প্রেম করেছি। কিন্তু কোনও দিন কোনও অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়নি। আমার সেই প্রেমিকা এখন আমার স্ত্রী।” পর্যটন উন্নয়ন গড়ার পাশাপাশি আশির দশক থেকে ডায়মন্ড হারবারে আবাসিক হোটেল তৈরি হতে থাকে। প্রায় তার সঙ্গে সঙ্গেই দেহ ব্যবসার ঠিকানা হতে শুরু করে এই শহর। চারিদিকে গজিয়ে উঠেছে হোটেল। আর এই হোটেল গুলিতেই চলছে এখন অবাধ প্রেম। হোটেল মালিকেরাও কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘর ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে অনায়াসে। ডায়মন্ড হারবার হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুখেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “ভ্যালেনটাইনস্ ডে-র দিন গ্রাহক বাড়ে। তরুণ যুগলরা বেড়াতে আসেন। তবে তাঁদের পরিচয়পত্র যাচাই করে রাখা হয়।” যাই হোক না কেন, প্রেমের ইতিহাসে এ শহর নিজের জায়গা বজায় রেখেছে বলে দাবি সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “এই শহর এবং ভালবাসার উল্লেখ রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় রয়েছে। ঘনিষ্ঠতা বৈধ হোক আর অবৈধ, চওড়া নদীর উপস্থিতি তাকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়ে এসেছে বরাবর।” ভ্যালেনটাইনস্ ডে ছাড়াও এ শহরে প্রেম থাকবে, মনে করেন নাট্যকর্মী ও শিক্ষিকা মৌসুমী মিত্র। তাঁর কথায়, “চুটিয়ে আড্ডা মারা, বেড়ানো, মনের সম্পর্ক গাঢ় করার জন্য এ শহর একদম ঠিকঠাক। সে কারণ রেস্তোরাঁ, গিফ্ট হাউস, হোটেল, মল এসবের বাইরে যদি কেউ ভালোবাসতে চায়, তাহলে এই শহর তাঁকে অবশ্যই স্বাগত জানাবে।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন