পাকা ছাদ জোটেনি আইসিডিএসের পড়ুয়াদের

গ্রামেরই রয়েছে পাকা ঘর। তবুও পড়ুয়ারা বসছে মাটির ঘরে। সাগরদ্বীপের ছোট একটি গ্রাম শিবপুর। গ্রামেরই মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিবেকানন্দ বিদ্যানিকেতনের পাঁচিলের গা ঘেঁসে একচিলতে টালির ঘর। কুয়াশা-সকালে সেই ঘরে হাজির হয়েছে চোদ্দ-পনেরো জন খুদে। এক পাশে জ্বলছে উনুন। খিচুড়ি রান্না চলছে। পাশেই ডাঁই করে রাখা রয়েছে জ্বালানি, ঘুঁটে,বাঁশ, নারকেল পাতা। ঘরে ধোঁয়ায় চোখ পাতা দায়। শ্লেটে মকশো দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পড়ুয়াদের কেউ কেউ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছছে।

Advertisement

শিবনাথ মাইতি

সাগর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪১
Share:

গ্রামেরই রয়েছে পাকা ঘর। তবুও পড়ুয়ারা বসছে মাটির ঘরে। সাগরদ্বীপের ছোট একটি গ্রাম শিবপুর। গ্রামেরই মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিবেকানন্দ বিদ্যানিকেতনের পাঁচিলের গা ঘেঁসে একচিলতে টালির ঘর। কুয়াশা-সকালে সেই ঘরে হাজির হয়েছে চোদ্দ-পনেরো জন খুদে। এক পাশে জ্বলছে উনুন। খিচুড়ি রান্না চলছে। পাশেই ডাঁই করে রাখা রয়েছে জ্বালানি, ঘুঁটে,বাঁশ, নারকেল পাতা। ঘরে ধোঁয়ায় চোখ পাতা দায়। শ্লেটে মকশো দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পড়ুয়াদের কেউ কেউ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছছে।

Advertisement

অথচ গ্রামেই ছয় বছর আগে তৈরি হয়েছে আইসিডিএসের পাকা ঘর। প্রায় ছ’লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল ওই কেন্দ্রটি। গ্রামে গ্রামে এখন বিদ্যুতের তার টাঙানোর কাজ চলছে। সেই কাজে যুক্ত শ্রমিকদের অস্থায়ী ঠিকানা হয়েছে কেন্দ্রটি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই কেন্দ্রটি চালু হলে অন্তত ৫০-৬০ জন পড়ুয়ার পড়াশোনার সুষ্ঠু বন্দোবস্ত হত। মাথার উপরে পাকা ছাদ জুটত। শৌচাগারেরও কোনও সমস্যা থাকত না।

ওই আইসিডিসের শিক্ষিকা প্রতিমা বর বলেন, “সব থেকে বড় সমস্যা হল শৌচাগারের। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কোথায় নিয়ে যাব ভেবে পাই না।”

Advertisement

কেন ওই কেন্দ্রটি পুরোপুরি হয়ে তৈরি হয়েও এখনও পড়ে রয়েছে তার কোনও সদুত্তর নেই প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে। সাগরের সিডিপিও অরিন্দম রায় বলেন, “যত দূর জানি জেলা পরিষদ থেকে ওই কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে কোনও কাগজপত্র নেই। কোন ভরসায় ওই ঘরের দখল নেব বলুন তো?”

আইসিডিএস কেন্দ্রটি তৈরি করার জন্য জমি দান করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তপনকুমার গায়েন। তিনি বলেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুবিধে হবে ভেবে জমি দান করেছিলাম। কিন্তু ছ’বছর ধরে কেন্দ্রটি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কবে যে চালু হবে কেউই সঠিক করে বলতে পারছেন না।”

শুধু ওই আইসিডিএস কেন্দ্রটি নয়, শিবপুরের পাশের গ্রাম ক্ষীরকূলতলাতেও একটি আইসিডিএস কেন্দ্র অর্দ্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নিম্নমানের ইমারতি দ্রব্য দিয়ে ওই ঘর তৈরি করা হয়েছিল। তাই ছাদ ঢালাইয়ের পর খুঁটি সরিয়ে নেওয়ায় পর পাকা ছাদ নিচের দিকে নেমে আসে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ঠিকাদার আরও বেশি মালমশলা দিয়ে ছাদ সমান করার চেষ্টা করেন। তাতে পরিস্থিতি আরও বেশি বিগড়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই কেন্দ্রের জমিদাতা গৌরমোহন প্রধান বলেন, “আইডিএস কেন্দ্র তৈরি করার নামে এখানে পুকুর চুরি চলছিল। গ্রামবাসীরা তা মেনে নেননি। ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাই আজও কেন্দ্রটি তৈরি হল না।” তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রটি যাতে চালু হয় তার জন্য বহু জায়গায় আবেদন করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”

সিডিপিও অরিন্দমবাবু জানান, এই মুহূর্তে সাগরে ৩৭১ আইসিডিএস কেন্দ্র চালু রয়েছে। তার মধ্যে পাকা ঘর রয়েছে ৭০টির। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে ৮৫টি কেন্দ্র। বাকিগুলি চলে হয় কোনও ক্লাবঘরে বা কারও বাড়ির বারান্দায়। পরিস্থিতি যখন এমনই তখন কেন জমি পেয়েও, পাকা ঘর থেকেও কেন তা কাজে আসছে না, অভিযোগ গ্রামবাসীদের।

দু’টো পাকা ঘর যে এ ভাবে পড়ে রয়েছে জানেনই না সাগরের বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।” একই সুর সাগরের বিডিও পার্থ মুখোধ্যায়েরও। তিনি বলেন, “পাঁচ-ছ’বছর আগে কোথায় কী হয়েছে আমি জানি না। ব্লকের অধীনে ১৮টি আইসিডিএসের পাকা ঘর তৈরি হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন