প্রচারের শেষবেলায় এসে হাত মেলালেন দুই প্রার্থী

শেষবেলার প্রচারে রাজনৈতিক সৌজন্যের সাক্ষী থাকল বনগাঁ। বুধবার দুপুরে কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডলের কনভয় যাচ্ছিল মোতিগঞ্জের দিকে। উল্টে দিক থেকে তখন বিশাল কনভয় নিয়ে আসছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। রায়ব্রিজের উপরে দু’টি কনভয় মুখোমুখি পড়ে যায়। দু’দিকের দুই প্রার্থী তখন হুডখোলা জিপে। দু’জনেই সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময় করেন। ঈষৎ ঝুঁকে হাত মেলান। আশপাশের পথচারীরাও সে দৃশ্য দেখে খুশি। কয়েক জনকে বলতে শোনা গেল, “গোটা ভোটটাই যদি এমন সৌজন্যের আবহে হত!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৯
Share:

সৌজন্য সাক্ষাৎ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

শেষবেলার প্রচারে রাজনৈতিক সৌজন্যের সাক্ষী থাকল বনগাঁ।

Advertisement

বুধবার দুপুরে কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডলের কনভয় যাচ্ছিল মোতিগঞ্জের দিকে। উল্টে দিক থেকে তখন বিশাল কনভয় নিয়ে আসছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। রায়ব্রিজের উপরে দু’টি কনভয় মুখোমুখি পড়ে যায়। দু’দিকের দুই প্রার্থী তখন হুডখোলা জিপে। দু’জনেই সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময় করেন। ঈষৎ ঝুঁকে হাত মেলান। আশপাশের পথচারীরাও সে দৃশ্য দেখে খুশি। কয়েক জনকে বলতে শোনা গেল, “গোটা ভোটটাই যদি এমন সৌজন্যের আবহে হত!”

এ দিন ছিল ভোটের প্রচারের শেষ দিন। বনগাঁয় বিশাল রোড শো করেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ কালুপুর বাজার থেকে যশোহর রোড ধরে রোড শুরু হয়। কয়েকশো নেতা-কর্মী নিয়ে হাঁটতে থাকেন মমতা ঠাকুর। সঙ্গে ছিলেন জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তৃণমূল নেত্রী দোলা সেন, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস প্রমুখ। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের নানা বিষয় তুলে ধরে ট্যাবলো বের করা হয়েছিল। একটি গাড়িতে মহিলারা দেশাত্মবোধক গান-বাজনা করছিলেন।

Advertisement

রোড শো-এর জন্য যশোহর রোডের দু’দিকে যানজট তৈরি হয়। আটকে পড়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্সও। জানতে পেরে মমতা নির্দেশ দেন, যে ভাবেই হোক অ্যাম্বুল্যান্সটিকে আগে ছেড়ে দিতেই হবে। রোগীর যেন কোনও অসুবিধা না হয়। নির্দেশ পালন করা হয় তৎক্ষণাৎ। কিছু দূর হাঁটার পরে একটি হুডখোলা গাড়িতে কয়েক জন নেতা-নেত্রীকে নিয়ে উঠে পড়েন মমতা। পরে বলেন, “প্রচারে প্রভূত সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যবধানন এ বার আরও বাড়বে।”

কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডল গোটা পাঁচেক গাড়ির সংক্ষিপ্ত কনভয় নিয়ে এ দিন গোটা মহকুমার নানা প্রান্তে চরকিপাক খেয়েছেন। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী, রাজীব গাঁধীদের ছবি, প্রার্থীর কাটআউট ছিল।

প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন জঙ্গিপুরের সাংসদ, তথা রাষ্ট্রপতির ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বোন শর্মিষ্ঠা এ বার কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন দিল্লিতে। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাঁর। সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অভিজিৎবাবু বলেন, “দাঁড়ানোটাই বড় ব্যাপার। ওর সাহসকে আমি সম্মান করি।” বনগাঁর প্রার্থী কুন্তল প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “তরুণ প্রার্থী। শিক্ষিত ছেলে। প্রথম বার ভোটে দাঁড়াল। ভাল সাড়া পড়েছে প্রচারে। যদি আগাগোড়া এমনই প্রচার হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের এখানে জেতার সম্ভাবনা আছে।” প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পরে কিছু কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক পার্টি অফিসে চড়াও হয়ে হেনস্থা করেছিলেন কুন্তলবাবুকে। সে প্রসঙ্গে অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, “যারা হামলা করেছিল, তারা আদৌ কংগ্রেসের কেউ কিনা, তা দেখা দরকার।” কুন্তল বলেন, “প্রচারে বেরিয়ে মানুষের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখলাম, তাতে আমি খুশি। শেষ সিদ্ধান্ত মানুষই নেবেন।”

বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর এ দিন বনগাঁ মহকুমার বাইরেই প্রচার সেরেছেন। গয়েশপুর ও কল্যাণীর দিকে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বনগাঁয় ফেরার সময়ে চাকদহ চৌমাথার আগে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে তাঁর কনভয়ের একটি গাড়ির কাচ ঢিল ছুড়ে ভাঙা হয়। কনভয়ের বাকি গাড়িগুলি অবশ্য এগিয়ে গিয়েছিল সে সময়ে। তবে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায়। সুব্রতবাবু বলেন, “প্রচারে ব্যাপক সমর্থন পেলাম। মানুষ যদি স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে পারেন, তা হলে জয়ের আশা করছি।’’ বনগাঁয় ফিরে অভিনেতা কৌশিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কিছু সময় প্রচার সেরেছেন সুব্রত।

এ দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন এসেছিলেন বনগাঁয়। নদিয়ার কয়েক জন তৃণমূল কর্মী এ দিন তাঁর হাত থেকে বিজেপির পতাকা নিয়ে দলে যোগ দেন।

চাঁদপাড়ার সেকাটি, গাইঘাটার ঘোজা-সহ কয়েকটি জায়গায় এ দিন সভা করেছেন বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “স্বরূপনগরের সীমান্ত এলাকায় পাচারকারীদের টাকায় ভোট করছে তৃণমূল। ওই সব জায়গায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে।” উপস্থিতি জনতার উদ্দেশে শমীকবাবুর মন্তব্য, “বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে (এখান থেকেই উপনির্বাচনে জিতেছিলেন শমীকবাবু) শিক্ষা নিন। অবাধে ভোট হবে। ভয় পাবেন না।”

সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী এ দিন সভা করেছেন স্বরূপনগরের চারঘাটে। মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তৃণমূল-বিজেপি একটা পরিবারের মধ্যে ঢুকে ভাঙন ধরিয়ে দিল।”

বাম প্রার্থী দেবেশ দাসের শেষবেলার প্রচার ছিল তুলনায় জৌলুষহীন। গোটা চারেক গাড়িতে মূলত গ্রামীণ এলাকার দিকেই ঘুরেছেন প্রার্থী। বনগাঁ পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডেও গিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ। দেবেশবাবু বলেন, “এ বার অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি।” তাঁর দাবি, দিল্লিতে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের ফলে বাড়তি সুবিধা পাবে বামেরা। এর জেরে বাম নেতা-কর্মীদের দল ছেড়ে বিজেপির দিকে যাওয়ার প্রবণতা কমবে বলেও তাঁর আশা। ভোটে যার প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন তিনি।

বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় গত কয়েক দিন ধরে পুরো সময়টাই মাইকের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়েছেন বনগাঁবাসী। কোনও না কোনও দল এখানে ওখানে ছোট ছোট সভা করেই গিয়েছে দিনভর। সেই সঙ্গে মাইক লাগানো গাড়ি ঘুরেছে নানা দিকে। ৫টার পরে মাইক বন্ধ হওয়ায় বহু দিন পরে সন্ধেটা স্বস্তিতে কাটালেন সাধারণ মানুষ। সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। বনগাঁ শহর এলাকার এক পরীক্ষার্থীর কথায়, “লোকসভা ভোট বলে কথা। মাইক বাজবে, প্রচার হবে, সবই ঠিক। কিন্তু মাইকের জ্বালায় এ ক’দিন খুবই অসুবিধা হল পড়াশোনায়। দেশের কথা বলছে সকলে। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যতের কথা কে ভাববে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন