পুলিশ-নেতাদের নাকের ডগা দিয়েই চলছে মাটি কাটার বেআইনি কারবার

কোথাও চাহিদাটা ইটভাটার। কোথাও নিচু জমি উঁচু করার প্রয়োজন। দু’টি ক্ষেত্রেই মাটি কেনার ক্রেতা আছে। আর ক্রেতা যখন আছে, বেআইনি হলেও সেই ব্যবসায় দু’পয়সা কামাতে চাইবে অনেকেই। এ ভাবেই বারাসত ১ ও ২ ব্লকে চলছে মাটি কাটার ব্যবসা। শীত পড়ার আগে যখন মাটি শুকনো থাকে, তখন কাজও চলে জোরকদমে। তবে সারা বছরই চাহিদা থাকায় মাটি-বোঝাই ডাম্পারের (মাটি বহনের গাড়ি) ছুটোছুটি দেখা যায় এই সব এলাকায়।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৪
Share:

কোথাও চাহিদাটা ইটভাটার। কোথাও নিচু জমি উঁচু করার প্রয়োজন। দু’টি ক্ষেত্রেই মাটি কেনার ক্রেতা আছে। আর ক্রেতা যখন আছে, বেআইনি হলেও সেই ব্যবসায় দু’পয়সা কামাতে চাইবে অনেকেই।

Advertisement

এ ভাবেই বারাসত ১ ও ২ ব্লকে চলছে মাটি কাটার ব্যবসা। শীত পড়ার আগে যখন মাটি শুকনো থাকে, তখন কাজও চলে জোরকদমে। তবে সারা বছরই চাহিদা থাকায় মাটি-বোঝাই ডাম্পারের (মাটি বহনের গাড়ি) ছুটোছুটি দেখা যায় এই সব এলাকায়। আর ডাম্পারের ধাক্কায় দুর্ঘটনাও ঘটে আকছার। সোমবারই যেমন মারা গিয়েছেন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা উত্তম বিশ্বাস নামে এক যুবক।

বিভিন্ন এলাকার মানুষের অভিযোগ, তৃণমূল এবং পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে মাটি কাটার বেআইনি ব্যবসা চলে। বারাসত ২ ব্লকের শাসন এলাকায় এখন যেমন চলছে মাটি কাটার মরসুম। এ সময়ে ভেড়ির জল শুকোতে শুরু করে। এ সময় মাটি নরম থাকে। কেটে নিতেও সুবিধা। পেল্লায় সাইজের মাটি কাটার যন্ত্র ঢুকছে এলাকায়। মঙ্গলবারও মাটি কাটার যন্ত্র ঢুকেছে শাসনে। শতাধিক ডাম্পারও ঢুকছে পাল্লা দিয়ে। বারাসত ২ নম্বর ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিতেই বেআইনি ভাবে মাটি কাটার কাজ চলে বলে অভিযোগ। এর মধ্যে রয়েছে শাসন, ফলতি বেলিয়াঘাটা, দাদপুর, কীর্তিপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা। শুধু ভেড়িই নয়, কৃষি জমির মাটিও কাটা হয়। কীর্তিপুর ১ পঞ্চায়েতের কৃষ্ণমাটি এলাকায় উঁচু কৃষি জমি কাটার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। শাসনের মিতপুকুরিয়াতেও শুরু হয়েছে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার কাজ।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, দিন-রাত এক করে চলে মাটি কাটার কাজ। রাতে আলোর ব্যবস্থা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতেই মাটি চালান হয়ে যায় ইটভাটায়। তবে দিনেও কমবেশি কাজ চলে। বারাসত ২ ব্লকে রয়েছে ৭২টি ইটভাটা। বারাসত ১ ব্লকেও রয়েছে ২৪টি ইটভাটা। এই ইটভাটাগুলি ছাড়াও নীলগঞ্জ, কোটরা, দেগঙ্গা, হাড়োয়া, কদম্বগাছি এবং বসিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলে যায় শাসনের মাটি। ফজরুল হক, স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “মূলত দু’রকমের মাটি ওঠে ভেড়ি থেকে। বেশির ভাগই লাল মাটি। এই মাটিই যায় ইটভাটায়। আর কিছু কালো মাটিও ওঠে। সেগুলি চলে যায় নিচু এলাকা ভরাটের জন্য।”

অভিযোগ, যখন ভরাটের কাজ চলে তখন বেলিয়াঘাটা-রাজারহাট রোডের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শাসন থানার সামনেই ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ে থাকে ডাম্পারগুলি। ফলে যানজট হয়। লেগে থাকে দুর্ঘটনা। সোমবার শাসন থানার কাছেই মারা গিয়েছেন উত্তমবাবু। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অবরোধে সামিল হন। তাঁদের অভিযোগ, কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। বরং শাসক দলের নেতাদেরই দেখা যায় পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “দুর্ঘটনা হলে ডাম্পার আটক ও চালককে গ্রেফতার করা হয়। বেআইনি ডাম্পারের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” অন্য দিকে, তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার সাধারণ সম্পাদক এবং ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য মতিয়ার সাপুঁইয়ের যুক্তি, “কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে না। ভেড়িতে পলি পড়ে মাছ চাষে যাতে ক্ষতি হয়ে যায়। সে জন্য বাড়তি পলি কেটে ভেড়ি গভীর করার জন্যই মালিকেরাই স্বেচ্ছায় ভেড়ির মাটি কেটে দিচ্ছেন।”

এলাকার মাছচাষিরা অবশ্য এ যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, বুক বা কোমর সমান জলই ভেড়ির মাছচাষে উপযুক্ত। গভীর জলে মাছ চাষে ক্ষতি হয়। ফলে মাছ চাষের জন্য পলি কাটার যুক্তি ঠিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন