ফের লেভেল ক্রসিং প্রাণ নিল যুবকের

‘গেট মিত্র’ নিয়োগ করার পরেও দুর্ঘটনা রোখা গেল না শিয়ালদহ-নামখানা শাখার সিংহেরহাট লেভেল ক্রসিংয়ে। কয়েক দিন আগে সেখানে দু’জনের মৃত্যু ঘটে যাওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি সাময়িক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সকাল থেকে বিকেলে নিরাপত্তা রক্ষীর নির্ধারিত ডিউটির সময় পেরোতেই সোমবার রাতে ওই ক্রসিংয়ে আরও এক জনের প্রাণ গেল।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কুলপি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০৩
Share:

‘গেট মিত্র’ নিয়োগ করার পরেও দুর্ঘটনা রোখা গেল না শিয়ালদহ-নামখানা শাখার সিংহেরহাট লেভেল ক্রসিংয়ে। কয়েক দিন আগে সেখানে দু’জনের মৃত্যু ঘটে যাওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি সাময়িক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সকাল থেকে বিকেলে নিরাপত্তা রক্ষীর নির্ধারিত ডিউটির সময় পেরোতেই সোমবার রাতে ওই ক্রসিংয়ে আরও এক জনের প্রাণ গেল। রেল কর্তৃপক্ষের যদিও একই দাবি, নিজেদের প্রয়োজনে অবৈধ ভাবে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করে, নিষেধ বা সাবধানতা অবলম্বন না করে লাইন পারাপারের জন্যই এত দুর্ঘটনা ঘটছে। যত্রতত্র তৈরি লেভেল ক্রসিংয়ের দায় তাঁদের নয়। তবু শীঘ্রই কর্মী নিয়োগ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

Advertisement

এ দিকে বছর চারেক আগে ওই শাখার করঞ্জলি স্টেশনের কাছে এ রকমই গেট-নিরাপত্তা রক্ষীহীন ক্রসিং পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়েন কৈলাস চক্রবতী নামে এক ব্যক্তি। এ বার সেই ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরের সিংহেরহাট লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের চাকায় প্রাণ গেল তাঁর ছেলেরও। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম উমাপ্রসাদ চক্রবর্তী (২৫)। বাড়ি কুলপির মেয়ানাপুর গ্রামে। ট্রেনের ধাক্কায় বাবা-ছেলের মৃত্যুতে পথে বসতে চলল একটা গোটা পরিবার।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ পাশের মৌলে গ্রামে পুজো করতে যান পেশায় পুরোহিত উমাপ্রসাদ। রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। মঙ্গলবার সকালে ওই ক্রসিংয়ের প্রায় ৩০ ফুট দূরে শিয়ালদহগামী রেল লাইনের ডান দিকে মাথা ও হাত থেঁতলানো দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসি‌ন্দারা। পুলিশ খবর পেয়ে দেহ উদ্ধার করে। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে পাথর মা লক্ষ্মীদেবী। কোনও মতে জানান, স্বামীকে হারিয়েছেন বছর কয়েক আগে। ছোট ছেলে উমাপ্রসাদই সংসারে এক মাত্র উপার্জনকারী। বড় ছেলে শিবপ্রসাদ মানসিক ভারসাম্যহীন। লক্ষ্মীদেবী এ দিন বলেন, “ওই ট্রেন আর লেভেল ক্রসিং আমার সব কেড়ে নিল। আমার কপালে আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্যও পাইনি। যতবার পঞ্চায়েত প্রশাসনের কাছে গিয়েছি, প্রতি বারই অপমানিত হয়ে ফিরতে হয়েছে।”

Advertisement

এ বিষয়ে কুলপির বিডিও সেবানন্দ পণ্ডা বলেন, “উনি কবে এসেছেন আমি জানি না। অনেক রকমের সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। এখানে এলে আপাতত মাসে ১২০ টাকা ও ২০ কিলো চাল দেওয়ার নিশ্চিত ব্যবস্থা করতে পারি।”

গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উমাপ্রসাদের মৃত্যুর ঘটনার খবর এলাকায় পৌঁছতেই তাই শোকস্তব্ধ প্রতিবেশীরাও। কলকাতা থেকে ময়না-তদন্তের পরে এলাকায় দেহ ফিরিয়ে আনার খরচ জোটানোর সামর্থ্যটুকুও তাঁদের নেই। তাই পুলিশকে অনেক বার অনুরোধও করেন দেহ না নিয়ে যাওয়ার জন্য। পুলিশ সে কথা না শোনায়, গ্রামের ছেলেরা খরচ জোগাড় করতে দল বেঁধে বাড়িতে বাড়িতে চাঁদা তুলতে বেরোন। প্রতিবেশীরা জানালেন, বছর কয়েক আগে ওই ক্রসিং পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় উমাপ্রসাদের ডান পা জখম হয়েছিল। তখনও তাঁরা চাঁদা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন