রাস্তা আছে। কিন্তু চলাচল নেই। ছবি: শান্তনু হালদার
যানজট এড়াতে নতুন বাইপাস তৈরি হয়েছে। অথচ, সে রাস্তায় যান চলাচল নেই বললেই চলে। যানজটে পড়ে ভোগান্তি হলেও প্রায় সবাই যাচ্ছে পুরনো রাস্তা দিয়ে। এমন কাণ্ডই ঘটছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা-অশোকনগরে।
প্রায় দু’দশক ধরে নানা টালবাহানার পরে কোটি-কোটি টাকা খরচ করে হাবড়া-অশোকনগরের মধ্যে যশোহর রোডের বাইপাস তৈরি হয়েছে। বসেছে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। কিন্তু নানা কারণে রাস্তাটি প্রায় অব্যবহৃতই থেকে গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকে অস্তিত্ব জানেন না বলে রাস্তাটি ব্যবহার করেন না। এলাকার মানুষ পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় বলে, বাইপাসটি এড়িয়ে চলেন। আর বাইপাসের দু’টি বাঁকে গার্ডওয়াল তৈরি না হওয়ায় এখনও পর্যন্ত যশোহর রোডের পণ্যবাহী ট্রাকগুলিকে এই রাস্তায় পাঠাতে আগ্রহী হয়নি প্রশাসন।
৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যশোহর রোড দিয়েই দিয়েই ঢাকা-কলকাতা বাস এবং ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সমস্ত পণ্য পরিবহণ হয়। দিনে রাতে হাজার-হাজার পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় হাবরায় যশোহর রোড অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা, যানজটের জন্য হাবরা ২ নম্বর গেট থেকে চোংদা মোড় পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা পার হতে গাড়িতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। বছর কয়েক আগে হাবরায় হকারমুক্ত করে যশোহর রোড চওড়া করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তার পরে হাবরা সদরের অনেক হকারই ফিরে গিয়েছেন রাস্তার উপরের জায়গাতেই। তার উপরে রয়েছে বেআইনি ভ্যান রিকশার দাপট, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে বাস এবং অটোর যাত্রী তোলার উপদ্রব। সেই পরিস্থিতিতে অশোকনগর থেকে এই বাইপাসটি ধরা গেলে হাবরা সদরের যানজট কাটিয়ে চলে যাওয়া যায় গাইঘাটার দিকে। সময়ও বাঁচে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, যানজট সমস্যা এড়াতেই বাইপাসটির পরিকল্পনা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা তৈরি শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। তারপর পাঁচ-পাঁচ বার বন্ধ হয়ে যায় বাইপাসের কাজ। শেষ দফায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচ করে সম্প্রতি শেষ হয় রাস্তাটি। ওই ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার সাত কিলোমিটার অশোকনগর-কল্যাণগড় এবং পাঁচ কিলোমিটার রয়েছে হাবড়া পুরসভার মধ্যে। অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় থেকে শুরু হয়ে ভাটশালা, দেবীনগর, বনবনিয়া, ডহরথুবা, আয়রা হয়ে হাবড়ার বেলগড়িয়ায় ফের যশোহর রোডে রাস্তাটি মিশে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষ জানান, যশোহর রোড ধরে গেলে ওই দূরত্ব বড় জোর সাত কিলোমিটারের মতো। পাঁচ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয় বলে অনেকে ওই পথ ধরতে চান না। তা ছাড়া, বাইপাস যে রয়েছে তা জানাতে সরকারি নির্দেশিকা নেই। ফলে, যাঁরা এলাকায় নতুন, তাঁরা জানেন না নতুন বাইপাসের কথা। তাই এ পথে গেলে হাবরার যানজট এড়ানো সম্ভব হলেও বাইপাস ধরছেন না প্রায় কেউই।
জেলার এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ওই বাইপাস দিয়ে একটু বেশি দূরত্ব যেতে হয় বলে অনেকে যেতে চান না। তবে বাইপাসটির অস্তিত্ব সম্পর্কে জনতা এবং ট্রাকচালকদের জানাতে নির্দেশিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” হাবরার পুরপ্রধান সুবীন ঘোষ জানান, পুর-এলাকার মধ্যে বাইপাসে বড় ট্রাকের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে এমন দু’টি বাঁক রয়েছে। তিনি বলেন, “ওই বাঁক দু’টিতে শক্তপোক্ত গার্ডওয়াল তৈরির জন্য আমরা পূর্ত দফতরকে জানিয়েছি। ওই গার্ডওয়াল দু’টি তৈরি হলেই বাইপাস দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে কোনও অসুবিধা থাকবে না।”