বেতন বাড়ানোর দাবিতে বনগাঁর কয়েকশো চিরুনি শ্রমিক গণ অবস্থান শুরু করলেন। সোমবার সকাল থেকে রামনগর রোডের পাশে ওই কর্মসূচি শুরু হয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে।
মহকুমাশাসক (বনগাঁ) সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যা মেটাতে শুক্রবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করছি, সেখানেই সমাধান সূত্র বের হবে।
গত ২৯ জানুয়ারি থেকে চিরুনি শ্রমিকেরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। ফলে কারখানাগুলিতে উৎপাদন থমকে গিয়েছে। আন্দোলনরত শ্রমিকেরা কখনও কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কখনও মিটিং-মিছিল বা অবরোধ করছেন। অনিল পাল, অসিত অধিকারী, তুষার মণ্ডলের মতো চিরুনি শ্রমিকের দাবি, “শ্রম আইন অনুযায়ী আমাদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। যে টাকা দেওয়া হয়, তাতে সংসার চলে না।” অনেকেই জানালেন, কর্মবিরতি চলায় সংসার চালাতে ছোটখাট কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জনকুমার সেন বলেন, “মালিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন বাড়ানো নিয়ে টালবাহানা করছেন। তা ছাড়া যে কাঁচামাল দেওয়া হচ্ছে, তা সেলুলয়েডের উপযুক্ত নয়। তাতে শ্রমিকদের খাটনি বেশি হচ্ছে, অথচ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করেছেন।”
মালিকেরা অবশ্য শ্রমিকদের দাবি মানতে নারাজ। মালিকদের সংগঠনের সভাপতি নারায়ণ ঘোষ বলেন, “শ্রমিকেরা আগাম কিছু না জানিয়েই কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
তাঁর দাবি, “আমরা বেতন বাড়াব না বলিনি। কিন্তু ওরা অত্যাধিক বেতন বাড়াতে চাইছে। তবে আমরাও চাই দ্রুত সমস্যা মেটাতে।” বিভিন্ন কারখানার মালিকের বক্তব্য, চিরুনি শিল্প অলাভজনক শিল্পে পরিনত হয়েছে। বনগাঁ মহকুমায় চিরুনি ছাড়া অন্য কোনও শিল্প নেই। এক সময়ে যশোহরের চিরুনির কদর ছিল গোটা দেশে। বর্তমানে বনগাঁ শহর ও সংলগ্ন ছয়ঘরিয়ায় প্রায় ১৪০টি চিরুনি কারখানা রয়েছে। তাতে হাজার খানেক শ্রমিক কাজ করেন। বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। সেই দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ দিনে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক হয়েছে দু’বার। বিধায়কের উপস্থিতিতেও একবার বৈঠক হয়েছে। তবে সমস্যা মেটেনি।
শ্রমিকের দাবি, প্রথমে যে হারে বেতন বাড়ানোর দাবি তাঁরা করেছিলেন, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তবুও মালিকেরা তা মানছেন না। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “দলের অনুমতি না নিয়েই শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেছেন। চেষ্টা করছি সমস্যা মেটাতে। আগামী শুক্রবার শ্রম দফতরের কর্তারাও বৈঠকে থাকবেন।”
সমস্যার সমাধান না হলে অনির্দিষ্ট কাল অবস্থান চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা।