সারেনি রাস্তা। ধুলোয় অতিষ্ঠ মানুষ। (ডান দিকে) সংস্কারের দাবিতে অবরোধে আটকে ট্রাকের সারি। ছবি: নির্মল বসু।
রাস্তা মেরামতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়নি। এ দিকে, ধুলোর দাপটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ, পথচারীরা। ধুলোর দাপটে ভাল দেখতে না পেয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। হাঁচি-কাশিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সব বয়সের মানুষ। যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে, তাঁদের তো প্রাণান্তকর অবস্থা।
এই পরিস্থিতিতে রাস্তা কেটে রাস্তা মেরামতির দাবিতে সরব হলেন বসিরহাটের সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ। বিক্ষোভের জেরে বৃহস্পতিবার ইটিন্ডার চৌরঙ্গিতে ওল্ড সাতক্ষিরা রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘোজাডাঙা সীমান্তে বাণিজ্যও থমকে পড়ে। বড় রকম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় তাদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলতে পারেনি পুলিশও। ফিরে আসতে হয় তাদের। রাস্তা সারানো না পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ চলবে বলে জানিয়ে দেন স্থানীয় মানুষ।
বসিরহাটের ইছামতী সেতু থেকে ইটিন্ডা হয়ে ঘোজাডাঙা সীমান্ত পর্যন্ত সোজা চলে গিয়েছে ওল্ড সাতক্ষিরা রোড। প্রায় ১০ কিলোমিটার এই রাস্তায় প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দীর্ঘ দিন মেরামতির অভাবে খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। অভিযোগ, রাস্তা মেরামতির দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করলেই প্রশাসনের পক্ষে কিছুটা জোড়াতালির কাজ করা হয়। তারপর সে সবও ভাঙতে বেশি সময় নেয় না। ফলে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নজর নেই কারও। আবার বার বার তাপ্পি দিতে দিতে রাস্তা আরও উঁচু-নিচু হয়ে গিয়েছে। চলাচল রীতিমতো বিপজ্জনক। দশ-বারো চাকার মাল-বোঝাই ট্রাক ওই বেহাল রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করায় ইট গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। ধুলোয় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় সকলের। দিনের বেলাতেও রাস্তায় নজর যায় না বেশি দূর। রাস্তার দু’পাশের গাছগাছালি, ঘরবাড়ি, এমনকী শীতের ফসল সব ধুলোর চাদরে ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
রাস্তা মেরামতির প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রশাসন কাজ না করায় এ দিন সকালে স্থানীয় চৌরঙ্গির কাছে এলাকার মানুষ রাস্তা কেটে, গাছের ডাল এবং মাটির বস্তা ফেলে অবরোধ শুরু করেন। রাস্তা জুড়ে ট্রাকের সারি দাঁড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তা সারানোর দাবিতে এর আগেও একাধিকবার অবরোধ-বিক্ষোভ হলেও তাতে কোনও কাজ হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা আসেন। দ্রুত রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। রাস্তার কাজ আর শুরু হয় না। তাই ফের রাস্তা কেটে অবরোধ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোসলেম সর্দার, আব্দুল মজিদ সর্দার বলেন, “একাধারে ভাঙাচোরা, তার উপরে গর্ত ঢাকতে ব্যবহার করা সুরকি। ধুলোর জেরে রাস্তার পাশে বাস করাই দায়। যাতায়াত করতেও সমস্যা হচ্ছে। ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ কারও হুঁশ নেই। পুলিশ-প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোন সুরাহা হচ্ছে না।” রাস্তা নিয়ে জেরবার গাড়ি চালকেরাও। বিক্ষোভের জেরে ওল্ড সাথক্ষিরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক চালক কালাম মণ্ডল, ভবেন গাইন, রতন মণ্ডলরা বলেন, “রাস্তা কাটায় বাণিজ্যের ক্ষতি হল ঠিকই। কিন্তু গ্রামবাসীদের এই বিক্ষোভ আমরা সমর্থন করি। রাস্তার জন্য গাড়ি ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটলে জনতা আমাদের ধরে মারছে। গাড়ি ভাঙচুর করছে।”
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ঘর-বাড়ি ধুলোয় ভরে যাওয়ার নষ্ট হচ্ছে ফসল। রাস্তার পাশে থাকা দোকান খোলা রাখতেও সমস্যা হচ্ছে। রবিউল গাজি, ফকিরা বিবিরা বলেন, “কোনও গাড়ি চলে যাওয়ার পরে ধুলোয় চারিদিক ভরে থাকায় দেখা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার রাস্তার গর্তে পড়ে অনেকে জখম হচ্ছেন। রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।” রাস্তার খারাপ দশার কথা মেনে নিয়ে বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন আর এক প্রস্ত আশ্বাস দিয়ে বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে।”