বেহাল ক্যানিং স্টেশন, উদাসীন কর্তৃপক্ষ

বছর চারেকের ছেলেকে কোলে নিয়ে নিউ গড়িয়া যাওয়ার জন্য ক্যানিং স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক মহিলা। গলদঘর্ম হয়ে অপেক্ষা করতে করতেই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেল ট্রেন। পরের ট্রেন এক ঘণ্টা পরে। বিরক্ত হয়ে প্ল্যাটফর্মের এদিক ও দিক ঘোরাঘুরি করছিলেন একটু পাখার তলায় বসবেন বলে। মাঝখানে শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল ছেলের। স্টেশনের শৌচাগারে গিয়েও সঙ্গে সঙ্গে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে গলা টানতে টানতে বেরিয়ে এলেন। ছুটলেন ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডের দিকে, সুলভ শৌচাগারের খোঁজে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৫
Share:

সব ক’টি কাউন্টার না খোলায় দীর্ঘ লাইন। ছবি: সামসুল হুদা।

বছর চারেকের ছেলেকে কোলে নিয়ে নিউ গড়িয়া যাওয়ার জন্য ক্যানিং স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক মহিলা। গলদঘর্ম হয়ে অপেক্ষা করতে করতেই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেল ট্রেন। পরের ট্রেন এক ঘণ্টা পরে। বিরক্ত হয়ে প্ল্যাটফর্মের এদিক ও দিক ঘোরাঘুরি করছিলেন একটু পাখার তলায় বসবেন বলে। মাঝখানে শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল ছেলের। স্টেশনের শৌচাগারে গিয়েও সঙ্গে সঙ্গে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে গলা টানতে টানতে বেরিয়ে এলেন। ছুটলেন ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডের দিকে, সুলভ শৌচাগারের খোঁজে।

Advertisement

এমন অভিজ্ঞতা শুধু এই এক জনের নয়। ক্যানিং স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করতে হয় যে নিত্যযাত্রীদের— তাঁদের সকলেরই প্রায় একই বক্তব্য। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনে টিকিট কাটার জন্য চারটি কাউন্টার থাকলেও বেশির ভাগ সময়ে দু’তিনটি কাউন্টার বন্ধ থাকে। দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকিট কাটতে কাটতে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন বেরিয়ে যায়।

শুধু রাজ্যের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবেই নয়, গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের অন্যতম উপায় হল ক্যানিং স্টেশন। কিন্তু স্টেশনটির যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, তা পায়নি। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্যও কোনও রকম বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এক সময়ে স্টেশনের ভিতরে বাইরে সুন্দরবনের নানা ছবি টাঙিয়ে তা আলোকিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক দিন ধরেই সেগুলি নেই। আগে টিকিট কাউন্টারের সামনে দু’টি পাখা লাগানো হলেও দীর্ঘদিন ধরে তার একটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। শৌচাগারের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। দীর্ঘ দিন ধরে সাফাই হয় না। প্ল্যাটফর্ম চত্বরে পড়ে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ। প্ল্যাটফর্মে বাতিস্তম্ভ থাকলেও আলো জ্বলে না। অন্ধকারে আকছার চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে। সঙ্গে রয়েছে নেশার আসর।

Advertisement

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যানিং স্টেশনকে মডেল হিসেবে গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আজও তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। ক্যানিং স্টেশনের সমস্যা নিয়ে অনেক বার রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনও লাভ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা শিবানী ঘোষাল, স্বপন দে-রা বলেন, “প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই স্টেশনের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।”

এ বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের বক্তব্য, “ওই স্টেশনে কী কী সমস্যা রয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রয়োজনে দফতরের সঙ্গে সমস্যার সমাধানের জন্য কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন