কবে খুলবে মিল? — নিজস্ব চিত্র।
বুনন বিভাগে কর্মী বদল করা নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়েছিল দিন কয়েক আগে থেকেই। শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করে। যার পরিণতিতে মিলে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিশ ঝোলাল কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের জগদ্দল চটকলে এই ঘটনায় কর্মহীন হয়ে পড়লেন হাজার তিনেক শ্রমিক। গত ছ’মাসে গঙ্গাপাড়ের এই শিল্পাঞ্চলে ৯টি চটকল বন্ধ হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি অল্প দিনের ব্যবধানে ফের চালুও হয়েছে। ঘটনাচক্রে চলতি বছরের মে মাসের পর থেকে বন্ধ হওয়া বেশ কয়েকটি চটকলের ক্ষেত্রেই শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কারখানায় তালা ঝোলানোর ঘটনা ঘটেছে। জগদ্দল চটকল সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্মী কম থাকা সত্ত্বেও বুনন বিভাগের তিন শ্রমিক ওমপ্রকাশ সিংহ, মহম্মদ নাসিম, দীপক ত্রিপাঠী, রবিন প্যাটেলকে অন্য বিভাগে বদলি করা হয়। কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘রুটিন বদলি’ বলে দাবি করলেও বুনন বিভাগের কর্মীরা তা মানতে চাননি। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিনয় মণ্ডল, দিবাকর মণ্ডল এবং বীরেন্দ্র মণ্ডল-সহ ওই চটকলের বেশ কয়েকজন শ্রমিক কিছু দিন ধরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন। সোমবারও কথা বলতে দেওয়া হয়নি এবং মঙ্গলবার ওই শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
চটকল কর্তৃপক্ষের দাবি, বহু পুরনো এই চটকলগুলিতে আধুনিকীকরণ না করলে ব্যবসা করা যাচ্ছে। চটকলের উৎপাদন মার খাচ্ছে এমনকি লোকসানের বোঝা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গিয়েছে যে চটকল বন্ধ করলেও লোকসান এড়ানো সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে চটকলগুলিকে আধুনিকীকরণের জন্য প্রস্তাব এবং আর্থিক সহায়তার কথাও জানানো হয়েছে।
কিছু দিন আগেই এশিয়ার বৃহত্তম চটকল নৈহাটি হুকুমচাঁদে সেই বুনন বিভাগেই আধুনিকীকরণ করা নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছিল। শ্রমিকদের একাংশের দাবি ছিল আধুনিকীকরণ মানেই কম লোক দিয়ে কাজ করানো হবে। আর নতুন মেশিনে কাজ শেখার সুযোগ পাবেন না প্রবীণ শ্রমিকেরা। কাজ হারানোর ভয়ে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। হুকুমচাঁদের সিইও সমীরকুমার চন্দ্র অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন, একজন শ্রমিকও কাজ হারাবেন না বলে। হুকুমচাঁদে আন্দোলন চলাকালীন তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই শ্রমিকের অভাব। দক্ষ শ্রমিক আমাদের তৈরি করতে হয়। একটার পর একটা চটকলে শুধুমাত্র কাজের লোকের অভাবে শিফট্ বন্ধ করতে হচ্ছে। শ্রম দিবস কমাতে হচ্ছে। সেখানে আমরাই চাই না কারও কাজ চলে যাক। কারণ লোকের দরকারটা আমাদের। শ্রমিকদের কয়েকজন কেন ভুল বুঝছেন জানি না।’’
সমীরবাবুর কথার রেশ ধরেই জগদ্দল চটকলের সিইও মনোজ সাঁতরা বলেন, ‘‘আধুনিকীকরণ মানে শ্রমিক কাজ হারাবে, এটা কারা ভাবাচ্ছে জানি না। চারজন শ্রমিককে বদলি করাটা কাজের নিরিখেই হয়েছিল। তাঁরা কাজ করতে চাননি বলে তাঁদের বসানো হয়েছে। কিন্তু তা বলে গোটা চটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন কয়েকজন শ্রমিক? আমরা চটকল চালু রাখতে চাই। কারণ, সাময়িক বন্ধ থাকা মানেই ব্যবসার অনেকটা ক্ষতি। এমনিতেই রুগ্ণ অবস্থা। দ্রুত কী ভাবে কারখানা চালু করা যায়, তা আমরাও ভাবছি।’’