বনগাঁয় আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনাস তৈরির ঘোষণা

আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনাস গড়া হবে বনগাঁ শহরে, সম্প্রতি বনগাঁ থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার রুটে নতুন বাস চালুর উদ্বোধন করতে এসে এমনই ঘোষণা করলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। যানজট সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরেই একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন বনগাঁ শহরের মানুষ। এর জন্য মিছিল করা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া কিছুই বাদ যায়নি। মহকুমাশাসকের দফতরে পুরসভা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করলেও এখনও পর্যন্ত সমাধান হয়নি কোনও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৪১
Share:

নতুন বাসের উদ্বোধনে পরিবহণমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনাস গড়া হবে বনগাঁ শহরে, সম্প্রতি বনগাঁ থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার রুটে নতুন বাস চালুর উদ্বোধন করতে এসে এমনই ঘোষণা করলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। যানজট সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরেই একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন বনগাঁ শহরের মানুষ। এর জন্য মিছিল করা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া কিছুই বাদ যায়নি। মহকুমাশাসকের দফতরে পুরসভা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করলেও এখনও পর্যন্ত সমাধান হয়নি কোনও। শনিবার ওই ঘোষণার পরে মদনবাবু বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে দ্রুত পরিকল্পনা পাঠালে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে। যত টাকা লাগবে তা আমরা দেব।’’

Advertisement

মন্ত্রীর এই ঘোষণায় নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দারা। বস্তুত এই প্রথম পরিবহণমন্ত্রী প্রকাশ্যে বাস টার্মিনাস তৈরির কথা ঘোষণা করলেন।

কোনও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস না থাকায় এত দিন ধরে বনগাঁ শহরের যানজট হচ্ছে। সড়কের উপর যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে বাস স্ট্যান্ড। যশোহর রোডে বাটার মোড় থেকে ১ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত এক কিলোমিটারেরও কম পথ পেরোতে সকালের দিকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়। রয়েছে অনুমোদনহীন ভ্যানের দাপটও। শহরের মধ্যে বনগাঁ-বাগদা সড়কে মতিগঞ্জে, বনগাঁ-চাকদহ সড়কে টাউন হল এলাকায়, আদালতের কাছে বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। এ ছাড়া নিউ মার্কেট এলাকায় যশোহর রোডের পাশে আরও একটি বাস স্ট্যান্ড রয়েছে। অভিযোগ, যাত্রী তোলার নামে দীর্ঘক্ষণ বাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাস।

Advertisement

এ দিন মন্ত্রী বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও পুরসভাকে বাস টার্মিনাসের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করেন। তাঁর কথায়, “জায়গা দেখিয়ে দিন। কাজ শুরু করব। আধুনিক শৌচাগার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকবে সেখানে।’’

কিন্তু সমস্যা তো জায়গা নিয়েই। কার্যত পর্যাপ্ত জমি না পাওয়ার কারণেই বাস টার্মিনাসের পরিকল্পনা কার্যকরী হয়নি। স্থানীয় চাঁপাবেড়িয়া এলাকায় পূর্ত দফতরের একটি জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে আবার রাজ্য সরকার একটি মোটেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলনও শুরু করেছেন। পুরসভার তরফে পূর্ত দফতরের ওই জমিতে বাস টার্মিনাস তৈরি করতে চেয়ে জেলাশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। প্রয়োজনে পূর্ত দফতরের ওই জমির পাশেই পুরসভার একটি জমিতে মোটেল তৈরি করার প্রস্তাবও জেলা প্রশাসনকে দিয়েছে পুরসভা।

পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, ‘‘বাস টার্মিনাস আমরা তৈরি করবই। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলেই পূর্ত দফতরের জমিটি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, জমিটি পেয়ে যাব।’’ বিশ্বজিৎবাবুও জানান, বিকল্প জমি খোঁজা হচ্ছে। তবে চাঁপাবেড়িয়া এলাকার জমিটি পেলেই সুবিধা হয়। তাঁর মতে, প্রয়োজনে টার্মিনাসের উপর মোটেল হতে পারে।

ডিএন-৪৪ রুটে বনগাঁ থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার জন্য নতুন ১৪টি বাস চালু হওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ।ওই রুটটি ২০০৯ সালে চালু হয়। আগেই ওই রুটে ২২টি বাস চলছিল। বারাসত বা মধ্যমগ্রাম থেকে সড়ক পথে বনগাঁ ফিরতে বাস পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এবার ওই সমস্যা কিছুটা কমবে বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা।

বাস টার্মিনাস তৈরির পাশাপাশি বনগাঁ স্টেডিয়ামকে নতুন করে সাজিয়ে আন্তজার্তিক খেলার মাঠের ব্যবস্থা করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মদনবাবু। বর্তমানে স্টেডিয়ামের একপাশেই শুধু গ্যালারি রয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী বনগাঁর পরিবহণ ব্যবস্থার হাল ফেরাতে বাস মালিকদের অনুরোধ করে বলেন, ‘‘আপনারা বনগাঁ থেকে হিলি বা শিলিগুড়ির মতো দূরের এলাকায় বাস চালান। রুট আমি দেব। বেকার ছেলেরা এগিয়ে আসুন। সাত দিনের মধ্যে পারমিট আর ৩ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করে দেব। কোনওরকম সিকিউরিটি ডিপোজিট লাগবে না।” পাশাপাশি বেশ কিছু বন্ধ রুটে ফের বাস চালানো শুরু করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস, মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। উপেনবাবু জানান, বনগাঁয় একটি কবিগান অ্যাকাডেমি তৈরি শুরু হয়েছে যার ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি তৈরি হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক মৈত্রী আরও দৃঢ় হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন