ভাগ্যিস বাড়িতে ফাটেনি বাজি, আতঙ্কিত পড়শিরা

থানা চত্বরে পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে পার্ক সার্কাস থেকে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির চার জন বিশেষজ্ঞ হাবরায় এসে নমুনা সংগ্রহ করলেন। কাচের টুকরো, বাজির খোল, সুতো, পোড়া গাড়ি খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। সঞ্জয় ভদ্র নামে যে ব্যক্তির বাড়ি থেকে বাজি উদ্ধার করে থানার আনার পরে বিস্ফোরণ ঘটে, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেআইনি শব্দবাজি মজুত করা এবং বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে হাবরা থানায়। ওই ব্যক্তি অবশ্য পলাতক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবরা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৪
Share:

জল ঢেলে নষ্ট করা হচ্ছে বাজি।

থানা চত্বরে পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে পার্ক সার্কাস থেকে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির চার জন বিশেষজ্ঞ হাবরায় এসে নমুনা সংগ্রহ করলেন। কাচের টুকরো, বাজির খোল, সুতো, পোড়া গাড়ি খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। সঞ্জয় ভদ্র নামে যে ব্যক্তির বাড়ি থেকে বাজি উদ্ধার করে থানার আনার পরে বিস্ফোরণ ঘটে, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেআইনি শব্দবাজি মজুত করা এবং বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে হাবরা থানায়। ওই ব্যক্তি অবশ্য পলাতক। তাকে খুঁজছে পুলিশ। সঞ্জয়ের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ দিন হাবরায় বেআইনি শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। প্রচুর বাজি আটক করে দমকলের গাড়ি থেকে জল ঢেলে সে সব নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জখম ছ’জন পুলিশ কর্মী সহ ন’জনের মধ্যে বিশ্বনাথ কুণ্ডু মানে এক যুবক ছাড়া বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুরে সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে দোদমা, চকোলেটবোমা এবং আলুবোমা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। আলুবোমাগুলি আকারে চকোলেট বোমার থেকেও বড়। সেগুলি ফাটাতে আগুন লাগে না। ছুড়ে মারলেই ফাটে। বোমাগুলিতে কোনও সুতলি ব্যবহার করা হয় না। আলু বোমার শব্দ দেশি বোমার মতোই তীব্র। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা এ দিন আলাদা করে আলু বোমার নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাতে কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল, তা বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখবেন বলে পুলিশের একটি জানাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ দলের তরফে এ নিয়ে অবশ্য সাংবাদিকদের কিছু জানানো হয়নি।

সঞ্জয় ভদ্রের বাড়ি। মঙ্গলবার ছবিগুলি তুলেছেন শান্তনু হালদার।

Advertisement

বিস্ফোরক রাখার ধারায় মামলা রুজু করা হল কেন? পুলিশের ব্যাখ্যা, বিস্ফোরণ যখন ঘটেছে তখন বিস্ফোরক তো ছিলই। তবে তা কী ধরনের জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষার উপরে ভরসা করতে হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে জিনিস আগুনের শব্দ ছাড়াই ফাটে তা সাধারণ বাজি নয়। বিস্ফোরক হিসাবেই তা ধরা হয়। সেই অর্থে আলুবোমার মশলাও বিস্ফোরক। তা ছাড়া, শব্দবাজির মধ্যে তো বিস্ফোরক থাকেই।

গোটা ঘটনায় হাবরা থানার পুলিশ কর্মীদের একাংশের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। তবে এই ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাবরা থানার বিষয়টি নিছকই দুর্ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তে এর পিছনে গাফিলতির প্রসঙ্গ মেলেনি। তবে কী ভাবে শব্দবাজি ফাটল, তা ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে।”

সোমবার গভীর রাতে ও মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ও দমকল সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে প্রচুর শব্দবাজি নষ্ট করে দিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সঞ্জয় অতীতে গাড়ি চালাত। পরে সাইকেলে করে মনোহারি জিনিসপত্র দোকানে দোকানে ফেরি করত। কবে থেকে সে বাড়িতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি মজুত করেছিল, তা কেউ জানতেন না। প্রতিবেশীদের অনেকেই বললেন, “ভাগ্যিস ওর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেনি। সব বাজি এক সঙ্গে ফাটলে তো গোটা পাড়াটাই উড়ে যেত!”

মঙ্গলবার থেকে পুলিশ শব্দবাজি বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে। একটি বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে এ জন্য। তারা বিভিন্ন বাজারে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছে।

এ দিন পুলিশ হাবরা শহর থেকে প্রচুর শব্দবাজি আটক করে। শব্দবাজি বিক্রির সময় পুলিশ এক জনকে গ্রেফতারও করেছে। পুলিশের আলাদা দু’টি টিম বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শব্দবাজি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। মানুষকে সচেতন করতে তরফে মাইকে প্রচার হচ্ছে। আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন নম্বর দিয়ে বলা হচ্ছে, শব্দবাজি বিষয়ে তথ্য থাকলে তাঁকে জানানোর জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন