মাটি পাচার নিয়ে ফের উত্তপ্ত শাসন

মাটি পাচার আর ভেড়ির মাছ চাষের বখরা নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল শাসন। বৃহস্পতিবার রাতে দুষ্কৃতী হানায় আহত হলেন তিন জন গ্রামবাসী, ভাঙচুর হয়েছে ১০টি বাড়িতেও। শাসন থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের হলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, তদন্ত চলছে। ঘটনায় এক দিকে, তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেমন প্রকাশ্যে এসে পড়েছে, সেই সুযোগে উত্তর ২৪ পরগনার এই ভেড়ি এলাকায় সিপিএমের হালে পানি ফিরে পাওয়ারও ইঙ্গিত মিলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৯
Share:

তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে বোমাবাজি, গোলাগুলিও চলে শাসনের গ্রামে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

মাটি পাচার আর ভেড়ির মাছ চাষের বখরা নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল শাসন। বৃহস্পতিবার রাতে দুষ্কৃতী হানায় আহত হলেন তিন জন গ্রামবাসী, ভাঙচুর হয়েছে ১০টি বাড়িতেও। শাসন থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের হলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, তদন্ত চলছে। ঘটনায় এক দিকে, তৃণমূলের অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেমন প্রকাশ্যে এসে পড়েছে, সেই সুযোগে উত্তর ২৪ পরগনার এই ভেড়ি এলাকায় সিপিএমের হালে পানি ফিরে পাওয়ারও ইঙ্গিত মিলছে।

Advertisement

মাটি-পাচারের ডাম্পার এলাকা দিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলে শাসনের কিছু গ্রামে স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে গত কয়েকমাস ধরে। গ্রামবাসীর বক্তব্য, ধানি-জমির মাটি কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে তাঁদের এলাকায় মাটি কাটার যন্ত্র এবং ডাম্পার ঢুকিয়ে নিয়মিত মাটি কেটে নিচ্ছে পাচারকারীরা। গ্রামের রাস্তা দিয়ে নিত্যদিন মাটি বোঝাই ডাম্পার যাতায়াত করলে তাঁদের মাটির বাড়ি ধসে পড়ে। ঘটে দুর্ঘটনাও। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে গত ২৪ ডিসেম্বর মাটি-মাফিয়াদের সঙ্গে গোলমাল বাধে শাসনের সহরা গ্রামের বাসিন্দাদের। এলাকার মানুষদের পেটানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা পাপ্পানা ভাড় ও শাসক দলের সক্রিয় কর্মী ইমাদুল হক তাঁদের অন্যতম।

পুলিশ সূত্রের দাবি, মাটি কারবারের বাড়বাড়ন্ত ছাড়াও ভেড়ির মাছ চাষের কমিশন নিয়েও ওই এলাকায় অসন্তোষ বাড়ছে। বাম আমল থেকে ওই এলাকায় ভেড়ির মালিকেরা আশপাশের বাসিন্দাদের মাছ চাষের মুনাফা থেকে সামান্য অংশ কমিশন হিসেবে দেন। এ জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা যেমন নানা উৎপাত সহ্য করেন, ব্যবসায়ীরাও অনেক অংশে মাছ-চুরি ঠেকাতে সক্ষম হন। ব্যাপারটা অলিখিত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকায় প্রায় প্রথার চেহারা নিয়েছে। বছরে প্রায় ন’মাস স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের পরিবারপিছু এই ‘কমিশন’ বাবদ মাসে হাজার দু’য়েক টাকা করে আয় হয়। ওই সব বাসিন্দাদের দাবি, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কমতে কমতে এখন তাঁদের অনেকেই আর ‘কমিশন’ পান না। সব মিলিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ছিল।

Advertisement

ইতিমধ্যে সহরা গ্রামের বাসিন্দাদের মারধরের অভিযোগে ধরা পড়া মাটি ব্যবসায়ীদের একাংশ জামিন পায়। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ মাটি ব্যবসায়ীদের ২৫ জনের সশস্ত্র একটি দল হানা দেয় সহরা গ্রামে। চলে বোমাবাজি। শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি ঘরবাড়ি, মোটরবাইক। হামলাকারীদের মারে জখম হন তিন গ্রামবাসী। অভিযোগ, আহতেরা যাতে হাসপাতালে যেতে না পারেন, সে জন্য রাতভর তাঁদের গ্রামের ভিতরে আটকে রাখা হয়। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে আহতদের মধ্যে মোতালেব মোল্লা নামে এক বৃদ্ধ ও তাঁর ছেলে আব্দুল মোল্লাকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ঘটনায় ক্ষোভ চেপে রাখেননি সহরায় তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত জুম্মান আলি। তাঁর অভিযোগ, “এক দিকে চলছে মাটি-পাচার, অন্য দিকে কমিশনের বখরা নিচ্ছে আমাদেরই দলের নেতাদের একাংশ। গ্রামবাসীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সবের প্রতিবাদ করাতেই সেই সব নেতাদের দলবল গ্রামে হামলা চালাচ্ছে।”

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বারাসত ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি ইফতিকারউদ্দিনের দাবি, “জুম্মান আলি এক সময় আমাদের দলের সহরা গ্রাম কমিটির সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তিনি সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভেড়ি এলাকায় গোলমাল পাকাচ্ছিলেন। তাই ওঁকে দল থেকে সরিয়ে দিয়েছি।” জুম্মান আলির পাল্টা জবাব, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছি। ইফতিকারউদ্দিনরা আমাকে সরানোর কে? ওরাই তো সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করছে।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের অন্দরে এই লড়াইয়ের সুযোগ নিতে তৎপর হয়েছে সিপিএম। শুধু সহরা নয়, এই এলাকায় নানা গ্রামে শাসক দলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে তারা। এলাকাবাসীদের কথায়, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাদের আমরা পাশে পাব, তারা আমাদের বন্ধু।” দীর্ঘদিন শাসন ছাড়া হয়ে থাকা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ মাস্টারের মন্তব্য, “মানুষকে বেশি দিন ভুল বোঝানো যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন