মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী কমল দক্ষিণে

গত বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যাটা ছিল ৭৪ হাজার ৮৬৯। এ বার ৮০০ কম। আর দু’দিন পরেই মাধ্যমিক। তার জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বারের চেয়ে কমে হয়েছে ৭৪ হাজার ৬৯। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার জন্য কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু করাকে কারণ হিসেবে মনে করছেন।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

গত বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যাটা ছিল ৭৪ হাজার ৮৬৯।

Advertisement

এ বার ৮০০ কম।

আর দু’দিন পরেই মাধ্যমিক। তার জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বারের চেয়ে কমে হয়েছে ৭৪ হাজার ৬৯। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমার জন্য কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু করাকে কারণ হিসেবে মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা নেই। তাই পড়ুয়াদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু নবম শ্রেণিতে একবার অকৃতকার্য হওয়ার পরে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ছাত্রছাত্রীরা আর পড়াশোনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা নানা কাজে যুক্ত হচ্ছে। তাই মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী কমছে।

Advertisement

ডায়মন্ড হারবারের ধনবেড়িয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপসপ্রিয় হালদারের কথাতেও শোনা গিয়েছে সেই সুর। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে আমাদের স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। নবম শ্রেণিতে প্রায় ১৮০-র কাছাকাছি পড়ুয়া থাকলেও এ বার দশম শ্রেণিতে রয়েছে মাত্র ৭৫ জন। চলতি বছরে মাধ্যমিক দেবে ৭১ জন। এই সংখ্যাটা আগে একশোর কাছাকাছি থাকত। পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার জন্যই ছাত্র কমছে বলে মনে হয়।’’

নবম শ্রেণি থেকে দশমে পাশ করে ওঠার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে কাকদ্বীপের বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতনেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘২০১২ থেকে এ পর্যন্ত আমাদের স্কুলে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নিয়মিত কমছে। পড়াশোনার চর্চা, উৎসাহ কমে গিয়েছে। তাই নবম শ্রেণিতে পরীক্ষায় ভাল ফল করতে না পেরে অনেক ছাত্রছাত্রী হতাশ হয়ে পড়া ছেড়ে দিচ্ছে।’’ তবে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তারা ওই যুক্তি মানতে চাননি। পর্ষদের জেলা আহ্বায়ক অজিত নায়েক বলেন, ‘‘জেলায় প্রায় ১১৩২টি স্কুল। সেখান থেকে এই সংখ্যায় পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া এমন অস্বাভাবিক কিছু নয়। ভর্তি কম হয়ে থাকতে পারে। তবে, স্কুলছুটের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে তা বলা যায় না। কন্যাশ্রী, মিড-ডে মিলের মতো কিছু প্রকল্পে উৎসাহিত হয়ে ছাত্রীরা পড়াশোনা চালাচ্ছে বেশি।’’ একই ভাবে জেলা স্কুল পরিদর্শক মৃন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘নবম থেকে দশমে ওঠার সময় ফেলের ধারা বরাবরই ছিল। তবে, পড়াশোনার মান নামছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তবে, তার জন্য সর্বশিক্ষা, মিড-ডে মিল এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ আগের চেয়ে আরও বেশি করে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।’’ অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, অনেক স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় উৎসাহ হারাতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষকেরা যেতে চাইছেন না। এ বার জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৩৯,৬৯৮। ছাত্রসংখ্যা ৩৪,৩৭১। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জেলায় ১২৩টি প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্র-সহ মোট ১৯২টি কেন্দ্র করা হয়েছে। প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে পর্ষদের অতিরিক্ত পরিদর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে। যা আগের বার পর্যন্ত ছিল না। এ বার প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে শুরু করে সাধারণ পরীক্ষাকেন্দ্র পর্যন্ত ৬ জন পদাধিকারী ছাড়া কারও হাতে মোবাইল ফোন যাতে না থাকে তার জন্য কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। গত বার এই নিয়ম থাকলেও তা এ বার আরও বেশি কড়া ভাবে পালন করা হবে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষার সময় বিভিন্ন রাস্তায় যানজটে ব্যাপক ভুগতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। তাই এ বার সারা জেলায় যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য চড়িয়াল মোড়, আমতলা, জয়নগর স্টেশন মোড়, ক্যানিং এসডিও অফিস মোড়, বারুইপুরে ক্যানিং এবং লক্ষীকান্তপুর যাওয়ার মোড়, হরিনাভির মতো মোট ১৪টি রাস্তার মোড়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমস্ত পয়েন্টগুলিতে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ বিভাগের সাহায্য নিয়ে যানজটমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, পরীক্ষাকেন্দ্র লাগোয়া জেরক্সের দোকান বন্ধ রাখা থেকে শুরু করে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশ প্রয়োজন মতোই নিয়োগ করা হবে। কন্ট্রোল রুমও চালু থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন