যানজট থেকে রেহাই কবে

দীর্ঘদিন শুধু প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস ছাড়া হাবরা শহরের যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বাস্তবায়ন আজও দেখলেন না শহরের মানুষ। তবে এ বার নাকি সত্যিই শহর যানজট মুক্ত হতে চলেছে এমনটাই দাবি হাবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তাঁর কথায়, “শহরে ২৫৫ মিটার একটি উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফে ওই কাজের সমীক্ষার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন চলছে ডিপিআর তৈরির কাজ। শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে।”

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০১:২৭
Share:

দিনের ব্যস্ত সময়ে হাঁসফাঁস অবস্থা শহরের। —নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘদিন শুধু প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস ছাড়া হাবরা শহরের যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বাস্তবায়ন আজও দেখলেন না শহরের মানুষ।

Advertisement

তবে এ বার নাকি সত্যিই শহর যানজট মুক্ত হতে চলেছে এমনটাই দাবি হাবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তাঁর কথায়, “শহরে ২৫৫ মিটার একটি উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফে ওই কাজের সমীক্ষার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন চলছে ডিপিআর তৈরির কাজ। শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে।” মন্ত্রী জানান, ওই উড়ালপুল তৈরির জন্য কেন্দ্র দিচ্ছে ৬০ শতাংশ। রাজ্য দিচ্ছে ৪০ শতাংশ টাকা। উড়ালপুল তৈরির কাজ শেষ হলে শহরের যানজটের স্থায়ী সমাধান হবে বলে মন্ত্রীর আশা। তিনি আরও জানিয়েছেন, হাবরা ছাড়াও যশোহর রোডে কাজিপাড়া, অশোকনগর ও বনগাঁতেও উড়ালপুল তৈরি হবে। তারও সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে কেন্দ্র।

তবে মন্ত্রীর আশ্বাসে খুব বেশি কি আস্থা রাখতে পারছেন হাবরা শহরের মানুষ? তাঁদের অনেকের কথায়, “না আঁচালে বিশ্বাস নেই।” শহরবাসীর এমন ধারণারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

Advertisement

শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজটের কুখ্যাতির কথা আজ গোটা রাজ্যের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। পথে বেরিয়ে যানজটে আটকে নরক যন্ত্রণা সহ্য করাকে নিজেদের ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন হাবরাবাসী। অতীতে যানজট মুক্ত শহরের দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ-আন্দোলন করলেও এখন আর শহরের মানুষ প্রতিবাদ করেন না। কারণ, করেও কোনও ফল মেলেনি, মিলেছে শুধু রাজনৈতিক নেতাদের ও প্রশাসনিক কর্তাদের আশ্বাস। তা যে স্রেফ ফাঁকা বুলি, তা নিজেদের অভিজ্ঞতায় এত দিনে শহরবাসী বেশ বুঝতে পেরেছেন।

বহুকাল কাল ধরেই বাসিন্দারা শহরে যশোহর রোডে উড়ালপুল তৈরির গল্প শুনছেন তাঁরা। নিয়ম করে প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে শহরবাসীকে যানজট মুক্ত শহরের স্বপ্ন দেখায়। ভোট মিটে গেলে সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।

২ নম্বর রেলগেট থেকে চোংদা মোড় পর্যন্ত যশোহর রোডের দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার। ওই পথ পেরোতেই কোনও কোনও সময়ে এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লেগে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরে যানজটের অন্যতম কারণ, অপরিসর রাস্তাঘাট। রাস্তার উপরে যাত্রী তোলার নাম করে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বাস-ট্রেকার-অটো। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকে ভ্যান। বাসিন্দারা জানালেন, লাইসেন্সহীন ভ্যানের দাপট এখনও কমেনি। সড়কের পাশে মোটর বাইক, সাইকেল দাঁড় করিয়ে মানুষ দোকান-বাজার করতে ঢোকেন। বনগাঁ মহকুমার মানুষকে সড়ক পথে কলকাতা যেতে হলে হাবরা হয়েই যেতে হয়। পেট্রাপোল বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ওই শহরের উপর দিয়েই যাতায়াত করে। মুমূর্ষ রোগী নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে বা গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল ও হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স করে যেতে হলে যানজটে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। রোগীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। অতীতে দেখা গিয়েছে, হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রসূতিকে নিয়ে আসার পথে যানজটে পড়ে অটোর মধ্যেই প্রসব হয়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষণ যানজটে দাঁড়িয়ে থাকার পরে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালান চালকেরা। তার জেরে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সড়কের পুরসভার যে কর্মীরা ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় ঠিকমতো যান নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বলেও অভিযোগ বাসিন্দারাদের। ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের নামে পথচারী ও যান চালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারে অভিযোগও তুলেছেন অনেকে।

রাজ্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পুলিশ-প্রশাসন থেকে ব্যবসায়ী সংগঠন সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে সড়কের দু’ধার কমবেশি হকার-মুক্ত করা হয়েছে। হকারদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য ১ নম্বর রেলগেটের কাছে তৈরি হয়েছে হকারর্স মার্কেট। হাবরা পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরকে যানজট মুক্ত করতে তৈরি হওয়া হকারর্স মার্কেটে ৮৮ জনকে ইতিমধ্যেই পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। জয়গাছিতে আরও একটি হকারর্স মার্কেট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

শহরকে যানজট মুক্ত করতে অশোকনগরের শেরপুর কালীবাড়ি মোড় থেকে হাবরার বেলঘরিয়া মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস তৈরি হলেও কোনও ওই রাস্তায় যানবাহন বিশেষ যাতায়াত করে না। ফলে রাস্তা তৈরির সুফল মেলেনি।

কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরির পরেও কেন এই দশা? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিনরাজ্যের ট্রাক, বাংলাদেশগামী অন্য যানবাহন অথবা কলকাতার দিক থেকে আসা বহু গাড়ি এই রাস্তাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহালই নয়। এলাকার মানুষ আবার পাঁচ কিলোমিটার ঘুরপথে যেতে হবে বলে রাস্তাটি এড়িয়ে চলেন। রাস্তার দু’টি বাঁকে গার্ডওয়াল এখনও তৈরি না হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় প্রশাসনও ভারি ট্রাক ওই পথে পাঠাতে আগ্রহী নয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, যানজট এড়াতেই বাইপাস তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ছোট গাড়ি তো যেতে পারে। কিন্তু সে জন্য অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় ও হাবরার বেলঘড়িয়া মোড়ে ট্র্যাফিক দাঁড় করানোর দরকার বলে জানিয়েছেন হাবরার চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শহরের মধ্যে যশোহর রোড সম্প্রসারণেও সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সে জন্য সড়কের দু’ধারের প্রাচীন গাছ কাটার কাজ শুরু হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “শহরের মধ্যে আট কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণ করা হবে। স্থানীয় বেলঘরিয়া মোড় থেকে শ্রীচৈতন্য কলেজ পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। দোকানদারেরা যদি স্বেচ্ছায় জমি দেন, তা হলে তাঁদের সরকারি জমিতে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। না হলে যেটুকু জমি পাওয়া যাবে, সেটুকুতেই কাজ চলবে।’’ হাবরা জয়গাছি সুপার মার্কেটে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আন্তরাজ্য বাস টার্মিনাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

সম্প্রতি হাবরা পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন নীলিমেশবাবু। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে যানজট মেটাতে তিনি নিজেই লাঠি হাতে যশোহর রোডে নেমে পড়েছিলেন। পুরপ্রধান জানালেন, শহরের মধ্যে বিভিন্ন রুটের অটো রিকশার স্ট্যান্ড আলাদা করা হচ্ছে। পুরসভার পক্ষ থেকে দশ জনের একটি স্পেশাল টিম তৈরি করা হয়েছে। যারা বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে রোজ যশোহর রোডে অভিযান চা সব মিলিয়ে ফের আর এক প্রস্ত প্রতীক্ষা করা ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারেন শহরবাসী! (শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর হাবরা’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন