কালীপুজোতে কী হবে? প্রশ্ন মানুষের

লক্ষ্মীপুজোর রাতে দাপট কমল শব্দবাজির, স্বস্তিতে হাবরাবাসী

লক্ষ্মীপুজোর রাতটা অন্য রকম কাটালেন হাবরা শহরের মানুষ। পুলিশের কড়া পদক্ষেপ, পুলিশ ও পুরসভার যৌথ ভাবে সচেতনামূলক প্রচার, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আবেদন— সব মিলিয়ে পুজোর রাতে এ বার শব্দবাজির দাপট অন্য বছরগুলির থেকে ছিল অনেকটাই কম। সাধারণ মানুষও গভীর রাত পর্যন্ত বাজার এলাকায় যাতায়াত করেছেন। দোকানপাটও খোলা ছিল। যার জেরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৭
Share:

লক্ষ্মীপুজোর রাতটা অন্য রকম কাটালেন হাবরা শহরের মানুষ।

Advertisement

পুলিশের কড়া পদক্ষেপ, পুলিশ ও পুরসভার যৌথ ভাবে সচেতনামূলক প্রচার, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আবেদন— সব মিলিয়ে পুজোর রাতে এ বার শব্দবাজির দাপট অন্য বছরগুলির থেকে ছিল অনেকটাই কম। সাধারণ মানুষও গভীর রাত পর্যন্ত বাজার এলাকায় যাতায়াত করেছেন। দোকানপাটও খোলা ছিল। যার জেরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কমার জন্য বাসিন্দারা কৃতিত্ব দিচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনকে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “মানুষের কাছে আবেদন করেছিলাম, তাঁরা যেন শব্দবাজি না ফাটান। ব্যবসায়ীদেরও অনুরোধ করেছিলাম, শব্দবাজি বিক্রি না করতে। হাবরা শহরের মানুষ সচেতনতারা কথা শুনেছেন বলে আমি খুশি।” পুলিশের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন মন্ত্রী।

বাজি ফাটলেই ফোন করুন এই নম্বরে

Advertisement

২৫২৪-০০৪২, ০০১২, ১১২৫, ২৫৪২-৬১৫৪

বস্তুত, হাবরাবাসীর একটা বড় অংশের মতে, শব্দবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের এই ভূমিকা তাঁরা অতীতে দেখেননি। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিসেশনের হাবরা শাখার সম্পাদক শিবনাথ পোদ্দারের বাড়ি স্থানীয় বাণীপুর এলাকায়। বললেন, “গত বছরের তুলনায় লক্ষ্মীপুজোর রাতে বাণীপুর এলাকায় অনেক কম বাজি ফেটেছে। জোরদার পুলিশি টহল আর তল্লাশিই তার কারণ বলে মনে হচ্ছে। অন্য বার গভীর রাত পর্যন্ত শব্দবাজি ফাটত। এ বার ছবিটা নিঃসন্দেহে বদলেছে।”

স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতায়, লক্ষ্মীপুজোর রাতটা এদ্দিন ছিল ভয়াবহ। হাবরা শহরের মানুষ জানতেন, শব্দবাজির তাণ্ডবে পথেঘাটে বের হওয়া যাবে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা রাস্তায় বেরও হতেন না। বাতাস ভারি হয়ে থাকত বারুদের গন্ধে। সাহস করে কেউ রাস্তাঘাটে বেরোলে কানে আঙুল দিয়ে চলতে হত। বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তিতিবিরক্ত হতেন। অসুস্থ মানুষেরও প্রাণান্ত হত। প্রকাশ্যেই চলত শব্দবাজি বিক্রি। পুলিশি অভিযান চোখে পড়ত না বলেই অভিযোগ।

এ বার কী বলছেন এলাকার মানুষ?

হাটথুবার বাসিন্দা গৃহবধূ সর্বাণী দেবনাথের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়। মঙ্গলবার রাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বললেন, “লক্ষ্মীপুজোর রাতে শব্দবাজির তাণ্ডব এতটাই থাকে যে কেউ বাড়িতে রাতে প্রসাদ খেতে আসতেন না। পর দিন সকালে আসতেন। এ বার অবশ্য রাতেই সকলে প্রসাদ খেয়ে গিয়েছেন।” সর্বাণীদেবী জানালেন, রাত ৮টার পরে দূরে বাজি ফাটার শব্দ পেয়েছেন। তবে দাপাদাপি অন্য বছরের মতো নয়। দক্ষিণ হাবরার বাসিন্দা সঙ্গীতশিল্পী মালা বসু কর। এই এলাকারই সঞ্জয় ভদ্র নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে শব্দবাজি আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে নামানোর সময় তা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আহত হন হাবরা থানার ছয় পুলিশ কর্মী-সহ ৯ জন। মালাদেবী বলেন, “মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত হাবরা বাজারে ছিলাম। শব্দবাজির কেমন কোনও তাণ্ডব কানে আসেনি। অন্য বছর রাস্তা ধোঁয়ায় ভরে যেত। ঘরের দরজা-জানলা এঁটেও গভীর রাতে দু’চোখের পাতা এক করা যেত না।” বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও কিছুটা স্বস্তিতে। প্রফুল্লনগরের বাসিন্দা বৃদ্ধ নিত্যানন্দ চৌধুরী বলেন, “আমি হৃদরোগে ভুগছি। বুকে পেসমেকার বসানো। অন্য বছর শব্দবাজির ভয়ে লক্ষ্মীপুজোর সময়ে মেয়ের বাড়িতে চলে যাই। এ বার নানা রকম প্রচার শুনে থেকে গিয়েছিলাম। রাতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।” জয়গাছির বাসিন্দা বৃদ্ধা মলিনা মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমি নার্ভের রোগী। প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজোর আগে থেকে আতঙ্কে ভুগি। শেষ কবে এমন কম শব্দবাজি ফেটেছে, মনে করতে পারছি না।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকে শহরে ৮টি বাইক একটি অটো ও দু’টি গাড়িতে পুলিশ রীতিমতো টহল দিয়েছে। প্রচুর শব্দবাজি আটক হয়েছে। শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে ৫ জনকে এবং ফাটানোর অভিযোগে ১০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান সুবীন ঘোষ বলেন, “পুলিশ ও পুরসভা যৌথ ভাবে প্রচার অভিযান চালিয়েছে। মানুষ সচেতন হয়েছেন। তার ফল মিলেছে। তা ছাড়া, সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি করেছে।” তাঁর মতে, থানায় বাজি ফেটে দুর্ঘটনাও জনমানসে প্রভাব ফেলেছে।

তবে পুলিশের চোখ এড়িয়েও বাজি কিছু কিছু ফেটেছে। পুলিশ কর্তাদের মতে, রাতভর টহল দিয়ে, র্যাফ নামিয়েও সম্পূর্ণ ভাবে শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতেই হবে। তবে মঙ্গলবার রাতে যেটুকু সাফল্য মিলেছে, তাতেই মানুষ ফোন করে বা এসএমএস করে আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

লক্ষ্মীপুজোর পরে এ বার কালীপুজোর পরীক্ষাতেও পুলিশ পাস করতে পারে কিনা, সে দিকে তাকিয়ে হাবরাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন