শৌচাগার তৈরি, ব্যবহার কবে হবে উত্তর নেই

ঝাঁ চকচকে শৌচাগার ভবন নির্মাণের পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। কিন্তু কোথাও রাজনৈতিক জটিলতা, কোথাও আবার সচেতনতার অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:১১
Share:

ঝাঁ চকচকে শৌচাগার ভবন নির্মাণের পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। কিন্তু কোথাও রাজনৈতিক জটিলতা, কোথাও আবার সচেতনতার অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

Advertisement

বছর পাঁচেক আগে ডায়মন্ড হারবার-২ ব্লকের হুগলি নদী-লাগোয়া রায়চক জেটিঘাটের পাশে শৌচাগার নির্মাণ হয়েছিল। সে সময়ে বাম বিধায়ক ঋষি হালদারের তহবিলের কয়েক লক্ষ টাকায় তৈরি শৌচাগার ভবনটিতে আজও তালা ঝুলছে।

পিকনিক স্পট হিসাবে এলাকাটি জনপ্রিয়। রায়চক থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের কুকড়োহাটি ভেসেলে পারাপারের যাত্রীরা যাতায়াত করেন এই পথে। এলাকায় অন্য কোনও সুলভ শৌচাগার নেই।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রায়চক জেটিঘাট মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রতিদিন ৩০-৪০টি বাস চলাচল করে। শৌচাগার না পেয়ে নদীর ধারে বা রাস্তায় শৌচকর্ম করেন অনেকেই। দূষণ ছড়ায়। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, পিকনিক মরসুমে পর্যটকেরা এলে শৌচকর্মের জন্য তাঁদের নির্ভর করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের করা অস্থায়ী শৌচাগারের উপরে। তা-ও সংখ্যায় সীমিত। রায়চক ঘাটের ইনর্চাজ তুষার ডাকুয়া বলেন, ‘‘শৌচাগার কেন এত দিনেও খোলা হচ্ছে না জানি না। তবে ওটা চালু হলে অনেকেই উপকৃত হবেন।’’

আর যাঁর তহবিলের টাকায় তৈরি হয়েছিল শৌচাগার, সেই ঋষি হালদারের আক্ষেপ, ‘‘আমি পর্যটক ও ভেসেলে পারাপার হওয়া নিত্যযাত্রীদের কথা ভেবে শৌচাগারটি নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এত দিনেও তা খোলা হল না।’’ এ জন্য রাজনৈতিক টানাপড়েনকেই দায়ী করেছেন তিনি।

ঋষিবাবু জানান, তিনি যখন বিধায়ক ছিলেন, তখন স্থানীয় নুরপুর পঞ্চায়েত ও ডায়মন্ড হারবার-২ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে ছিল। তবে এখন দু’টোতেই সিপিএম ক্ষমতায়। কিন্তু এর জেরে শৌচাগার চালু হবে না কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনিও।

ডায়মন্ড হারবার ২ বিডিও বর্ণমালা রায় বলেন, ‘‘সে সময়ে কিছু সমস্যার জন্য খোলা যায়নি বলে শুনেছি। তবে ওই শৌচাগার নিয়ে খুব শীঘ্রই পঞ্চায়েতকে নিয়ে সভা ডেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’

একই ভাবে মথুরাপুর-১ ব্লকে ঘোড়াদল-মথুরাপুর রোডে কালীতলা মোড়ে ২০১৩ সালে সাংসদ তহবিলের টাকায় শৌচাগার নির্মাণ হয়েছিল। আজও তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ ওই মোড়ে সকাল-বিকেল বাজার বসে। জায়গাটি মথুরাপুর স্টেশন, রায়দিঘির কাশীনগর বাসমোড়, মন্দিরবাজারের মাধবপুর বাজার ও ঘোড়াদল যাওয়ার সংযোগস্থল। বহু মানুষের যাতায়াত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলের অভাবে শৌচাগারটি নির্মাণ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে মানুষ রাস্তায় মাঠে-ঘাটে সর্বত্র শোচকর্ম করছে। এতে এলাকায় দূষণ বাড়ছে। ওই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমিয় গায়েন বলেন, ‘‘সুলভ শৌচাগার ব্যবহার নিয়ে সচেতনতার অভাবে ওটা খোলা যায়নি। মথুরাপুর ১ বিডিও মৃদুল শ্রীমাণী বলেন, ‘‘অবিলম্বে খোঁজ নিয়ে দেখব, কেন চালু করা যাচ্ছে না শৌচাগার।’’

মন্দিরবাজারের বিজয়গঞ্জ মোড়ের কাছে প্রায় সাত মাস আগে পূর্ত দফতর থেকে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু নীল-সাদা রঙের ওই শৌচাগারটি এখনও তালাবন্ধ। জল, বিদ্যুৎ সংযোগ সব ঠিকঠাক থাকলেও শৌচাগারের বর্জ্য নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ শেষ হয়নি বলে চালু করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। প্রায় হাফ কিলোমিটার নিকাশি নালাটি পড়বে পোলের হাট খালে। কিন্তু ওই নিকাশি নালার কাজ কবে শেষ হবে, তা জানা নেই কারও।

মন্দিরবাজারের বিডিও অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, ‘‘শৌচাগারের বর্জ্য বের করার জন্য নিকাশি নালা তৈরির কাজ চলছে। স্থানীয় ঘটেশ্বরা পঞ্চায়েতকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন