ষাঁড়ের দেখভাল করতে গিয়ে নাজেহাল কাকদ্বীপের পুলিশ

রাতে বোধহয় পেট ভরে খাওয়া জোটেনি। নতুন আস্তানায় এসে ঘুমও ঠিকঠাক হয়নি। তাই সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেখা গেল থানার সামনে কদমতলার ছায়ায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকতে। আর ও দিকে তার পেট ভরানোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে কার্যত গলদঘর্ম অবস্থা পুলিশের।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০১:১৮
Share:

তখন বিশ্রামে।—নিজস্ব চিত্র।

রাতে বোধহয় পেট ভরে খাওয়া জোটেনি। নতুন আস্তানায় এসে ঘুমও ঠিকঠাক হয়নি। তাই সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেখা গেল থানার সামনে কদমতলার ছায়ায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকতে। আর ও দিকে তার পেট ভরানোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে কার্যত গলদঘর্ম অবস্থা পুলিশের। এক পুলিশকর্তাকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গেল, “ব্যাটাকে রাতে এক ঝুড়ি ঘাস এনে দিলাম। সকাল না হতে হতেই সব সাবাড়ে ফেলেছে! এখন কোথা থেকে কী যে এনে দিই।” কর্তার এই দুশ্চিন্তা দেখে এক অধস্তন পুলিশকর্মী পরামর্শ দিলেন, “স্যার, এরা হল বাজারে ঘুরে বেড়ানো বাউন্ডুলে পার্টি। ঘুরে ঘুরে আধপচা শাক-সব্জি খায়। কাউকে দিয়ে বাজার থেকে সে সব আনিয়ে নিন। দেখবেন তাতেই ব্যাটার পেট ভরবে।”

Advertisement

সহকর্মীর কথাটা বোধহয় মনঃপূত হল পুলিশ কর্তার। সঙ্গে সঙ্গে হাত চলে গেল বুক পকেটে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোনের ও প্রান্তের কাউকে শোনালেন, “দ্যাখ না, একটা ষাঁড়কে নিয়ে মহাফ্যাসাদে পড়েছি। ব্যাটাকে এতো খাওলাম। তবুও পেট ভরল না!” বললেন বাজার থেকে কিছু শাক-সব্জি আনতে। সেই সঙ্গে বক্রোক্তি, “ব্যাটা খেতে পারে, ঘুমোতে পারে, আর গুঁতোতে পারে। শুধু মনিবের নাম বলতে পারে না!”

সমস্যার শুরু সোমবার। রাত সাড়ে ৯টার নাগাদ কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডের কাছে ছোট ম্যাটাডোরে একটি ষাঁড়কে নিয়ে কয়েক জন যুবককে ডায়মন্ড হারবারের দিক থেকে আসতে দেখা যায়। তাদের হাবভাব দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তারা ম্যাটাডোরটি আটকায়। এ কথা সে কথায় ঠিকঠাক উত্তর মেলেনি। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেদের। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ষাঁড় ফেলে চম্পট দেয় ম্যাটাডোরে থাকা যুবকেরা। অগত্যা থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে সাড়ে রাত ১০টা নাগাদ ষাঁড় নিয়ে থানায় যায়।

Advertisement

সরকারি আইন মোতাবেক, দাবিদারহীন বস্তু বা পশু উদ্ধার হলে আদালতে তার বিবরণ জানিয়ে একটি নথি পেশ করতে হয়। সেই অনুযায়ী পুলিশ মঙ্গলবার সকালে ষাঁড়টির বিবরণ জানিয়ে কাকদ্বীপ আদালতে নথি পেশও করেছে। খবর দেওয়া হয়েছে কাকদ্বীপ বিডিও অফিসে। কাকদ্বীপের বিডিও অভিজিত্‌ বিশ্বাস জানান, ষাঁড়টির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্লক পশু চিকিত্‌সা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত দিন না ষাঁড়ের কোনও দাবিদার খুঁজে পাওয়া যায়, তত দিন সে থাকবে পুলিশের হেফাজতেই।

সব দেখে-শুনে চোখ কপালে উঠেছে থানার পুলিশ কর্মীদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন