সেতুর জন্য দোকান ভাঙতে সময় চাইছে ব্যবসায়ী মহল

হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপর সেতু নিমার্ণের জন্য সম্প্রতি প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে, ২৫ অগস্টের মধ্যে এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের নিজেদের দোকান ও বাড়িঘর ভেঙে ফেলতে হবে। তার জেরে গত তিন দিন ধরে দোকানপাট বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার সেই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। নামখানায় একটি প্রেক্ষাগৃহে সভা করেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নামখানা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪৩
Share:

এ ভাবেই এখন নদী পারাপার করেন যাত্রীরা। ছবি: দিলীপ নস্কর।

হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপর সেতু নিমার্ণের জন্য সম্প্রতি প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে, ২৫ অগস্টের মধ্যে এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের নিজেদের দোকান ও বাড়িঘর ভেঙে ফেলতে হবে। তার জেরে গত তিন দিন ধরে দোকানপাট বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার সেই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। নামখানায় একটি প্রেক্ষাগৃহে সভা করেন তিনি।

Advertisement

গত প্রায় ৫০ বছর ধরে নারায়ণপুর ও নামখানা সংযোগকারী প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার করছেন বাসিন্দারা। নদীর দু’পাশে নামখানা ও নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সেচ দফতর ও পূর্ত দফতরের জমিতে অনেক দিন আগে থেকেই গড়ে উঠেছিল দোকানপাট ও বসতি এলাকা। ক্রমশ জনসংখ্যা বাড়ে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব পেতে শুরু করে বকখালি। নদী পারাপারের জন্য একটি সেতুরও দাবি উঠতে শুরু করে। বিশেষ করে, গভীর রাতে খেয়া না থাকায় রোগীকে নিয়ে কাকদ্বীপ হাসপাতাল বা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে যেতে হলে সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। এ ছাড়াও নামখানা পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার নামখানা, হরিপুর, শিবরামপুর, মৌসুনি, ফ্রেজারগঞ্জ এলাকার পাঁচটি পঞ্চায়েতের প্রায় তিন লক্ষ মানুষকে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা কাজের জন্য নদী পেরিয়ে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতায় যাতায়াত করতে হয়।

এলাকার বাসিন্দারা ছাড়া সমস্যায় পড়েন পর্যটকেরাও। বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ কেন্দ্রে পঞ্চাশটিরও বেশি বেসরকারি ও কয়েকটি সরকারি হোটেল রয়েছে। সেখানে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করার জন্যও হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর উপর সেতুটি জরুরি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগে সেতুটি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। প্রায় ১২০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুটি নদীর উপরে ভরা জোয়ারের সময়ের জলস্তর থেকে ৪০ ফুট উঁচুতে তৈরি হওয়ার কথা। সেতু তৈরির জন্য নদীর দু’পাড়ে দু’কিলোমিটার চওড়া জায়গা প্রয়োজন। দেখা গিয়েছে, নামখানার দিকে ওই জায়গায় ৩১৮টি ও নারায়ণপুরের দিকে ওই জায়গায় ৬০৩টি দোকান ও বসতবাড়ি রয়েছে।

কেন্দ্রের অনুমোদন পাওয়ার পরপরই প্রশাসনের তরফে ২৫ অগস্টের মধ্যে ওই জায়গা খালি করার জন্য বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বিকল্প বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এত তাড়াতাড়ি সরে যাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে বর্ষায় এত দ্রুত সব ব্যবস্থা কী করে করবেন তাঁরা? সামনে উৎসবও রয়েছে। তাই নির্মাণ ভাঙার সময়সীমা বাড়ানো হোক। এ ছাড়াও, অন্য জমি অধিগ্রহণ করে একটি বাজার তৈরি করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সভাপতি পঞ্চানন কর বলেন, “আমরা চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছি। আমাদের দোকান বা বাড়ি ভাঙতে আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার অন্য জমি অধিগ্রহণ করে একটা বাজার তৈরি করে দিক।”

নামখানার ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুমারেশ পণ্ডার বক্তব্য, “আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি, একটি সেতু হোক। কিন্তু তার জন্য যে ভাবে জোর-জুলুম করছে সরকার, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।” মঙ্গলবার বিকেলের সভায় কান্তিবাবু বলেন, “মন্ত্রী থাকাকালীন সুন্দরবন এলাকায় ২৯টি সেতু নির্মাণ করেছি আমি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাছাড়া সরকারি নিয়মানুযায়ী, ১২ বছর কোনও জমিতে বসবাস করলে, ওই জমির অধিকার পায় বসবাসকারী।” তাঁর দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে সেতু নির্মাণের কাজ হোক।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সেতুটি নির্মাণ করতে কেন্দ্র সরকার ২৪০ কোটি টাকা ও রাজ্য সরকার ২৫ কোটি টাকা দেবে। যাঁরা সরে যাবেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের জন্য ২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, সেতু তৈরির কাজ শুরু হলেই ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া শুরু করা হবে। সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “ওই সেতু নির্মাণের জন্য জেলাশাসকের অফিসে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ অগস্টের মধ্যে নদীর পাশের দু’কিলোমিটারের মধ্যে সব নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে।” তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের একটি বাজার করে দেওয়ারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন