বাইরে অঙ্কের প্রশ্ন, খোকাবাবু গ্রুপের ধৃত ৩

পরপর চার পরীক্ষার প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় এ দিন অঙ্কের ক্ষেত্রেও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না-ঘটে, সেই জন্য জেলায় জেলায় স্কুলগুলিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল পর্ষদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

পরীক্ষা চলাকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ছড়ানোর অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।

নিরাপত্তা নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বাগাড়ম্বর, শিক্ষামন্ত্রীর উষ্মা ও হুঁশিয়ারি, শিক্ষা শিবিরের উদ্বেগ ও সমালোচনা— কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সোমবার মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

তবে বসে নেই সিআইডি। পরীক্ষা চলাকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ছড়ানোর অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। কিন্তু তাতে মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থার হাজারো ফাঁকফোকর ঢাকা দেওয়া যায়নি।

পরপর চার পরীক্ষার প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় এ দিন অঙ্কের ক্ষেত্রেও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না-ঘটে, সেই জন্য জেলায় জেলায় স্কুলগুলিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল পর্ষদ। এমনকি এ দিন সকালেও পর্ষদ-সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ক ও স্কুলশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন ভিডিয়ো-সম্মেলনে সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বাড়তি সতর্কতা নিতে বলা হয়। কিন্তু নির্দেশ বা সাবধানবাণী কাজে আসেনি। অঙ্কের প্রশ্নও বেরিয়ে যায় মোবাইলের মাধ্যমে।

Advertisement

সিআইডি জানিয়েছে, মাধ্যমিকের প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগে বিভিন্ন জেলা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার এবং দু’জনকে আটক করা হয়েছে। মালদহে সাহাবুল আমিন, কাটোয়ায় শাহনাজ মণ্ডল এবং হুগলিতে সাজিদুর রহমান গ্রেফতার হয়েছে। তারা ‘খোকাবাবু’ নামে একটি হোয়াটাসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে প্রশ্নপত্র ছড়াচ্ছিল বলে অভিযোগ। প্রশ্নের উত্তর লিখে ফের ওই গ্রুপে পোস্ট করা হত বলে তদন্তকারীরা জানান। সাহাবুল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। উত্তর ২৪ পরগনার বিধাননগর সাইবার থানায় মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই সাহাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। সিআইডি জানিয়েছে, আটক দু’জনকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। তারা দু’জনেই মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। জেরার জন্য তাদের বিধাননগরের সাইবার থানায় আনা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, এই চক্রে আরও কয়েক জন রয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি আবার পর্ষদের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছেন।

প্রশ্ন উঠছে, বারবার কড়া নজরদারির কথা বলা সত্ত্বেও ফের প্রশ্ন বেরিয়ে গেল কী ভাবে? বাকি রয়েছে পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা ও ঐচ্ছিক পরীক্ষা। অভিযোগ, পরীক্ষা শেষ হতে চলল। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ার রোগ এখনও নির্মূল করতে পারল না পর্ষদ।

বারবার প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় পার্ক স্ট্রিটের পর্ষদ অফিসের সামনে এ দিন বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ। তাদের একটি দল পর্ষদের ভিতরে ঢুকে যায়। অন্য একটি দল গেট বন্ধ করে বাইরে ধর্নায় বসে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রশ্ন ফাঁসের দায় স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এবং পর্ষদ-প্রধান কল্যাণময়বাবুকে ইস্তফা দিতে হবে।

এ দিন ফের প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতিতে গলদ আছে বলে মনে করছে কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের অভিযোগ, ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার্থী হলে বাবা-মায়েদের যে নজরদার হওয়ার কথা নয়, সেই নিয়মও অনেক জায়গায় মানা হচ্ছে না। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘পরীক্ষা চলাকালীন বারবার প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার্থীদের উপরেও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে আস্থা হারাচ্ছে তারা।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল ও পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের মতে, ‘‘সামনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ওই পরীক্ষায় এই ধরনের ঘটনা আটকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করছি শিক্ষামন্ত্রীকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন