বোর্ড গঠন নিয়ে সংঘর্ষ, মালদহে একরত্তির মাথা ফুঁড়ে বেরল গুলি

মালদহের মানিকচকের রামনগর গ্রামে মৃণাল মণ্ডল নামে ওই শিশুর মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে গুলি। 

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মানিকচক শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১২
Share:

রক্তাক্ত: মালদহের মানিকচকে গুলিবিদ্ধ শিশু। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন নিয়ে সংঘর্ষে এ বার গুলিবিদ্ধ হল তিন বছরের আরও একটি শিশু। মালদহের মানিকচকের রামনগর গ্রামে মৃণাল মণ্ডল নামে ওই শিশুর মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে গুলি।

Advertisement

মানিকচক ব্লকেরই গোপালপুরে সোমবার বোমার স্‌প্লিন্টারে আহত হয় জিশান শেখ নামে বছর তিনেকের একটি শিশু। সে এখন অনেকটা সুস্থ। কিন্তু বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ মৃণালের অবস্থা সঙ্কটজনক। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। সেখান থেকে মালদহেরই একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ক্ষতর ধরন দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সেভেন এমএম কিংবা নাইন এমএম পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে।’’

তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপির দিকে। জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিহার থেকে ভাড়া করা গুন্ডা এনে নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েছে বিজেপি। আমাদের কর্মীদের শান্ত থেকে পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, তাঁরা বোমা-গুলির রাজনীতি করেন না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও অপরাধীর গায়ে কি দলের নাম লেখা থাকে? তবে বিজেপি বা যে দলেরই হোক, দোষীদের পুলিশ গ্রেফতার করুক।’’

Advertisement

জিশানের পরিবার সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃণালের মা পুতুল মণ্ডল অবশ্য মানিকচক গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছেন। তবে ফল বেরোনোর পরপরই তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর দলবদলের ফলেই এই পঞ্চায়েতে বিজেপি ও তৃণমূলের শক্তি সমান হয়ে দাঁড়ায়। মঙ্গলবার টস হয়। তাতে জিতে বোর্ড দখল করে বিজেপি। তার পরই বৃহস্পতিবার বিকেল চারটের সময় দুষ্কৃতীরা পুতুলদেবীর বাড়ির দিকে গুলি ছোড়ে। তখন তিনি নিজেই বারান্দায় বসেছিলেন। তাঁর স্বামী পরিমলবাবু দাঁড়িয়েছিলেন
বাড়ির সামনেই। হঠাৎ কয়েক জন এসে গুলি চালায়।

কান্নায় ভেঙে পড়ে পুতুলদেবী বলেন, ‘‘আমি চাই আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠুক। আর পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দিক।’’ তাঁদের পাশে থেকে চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহনের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল সরকার। পরিমলবাবু একটি পেট্রল পাম্পে কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে মৃণালই ছোট। তৃণমূলের দাবি, দলবদলের পর থেকেই পুতুলদেবীর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পরিমলবাবুর অভিযোগ, দলবদলের পরে পুতুলদেবীর পরিবারের উপরে আগেও বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছিল। সেই সময় এক জন বিজেপির কর্মী গ্রেফতারও হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জানান, তার পরেও বিজেপির কিছু নেতাকর্মী পুতুলদেবীদের হুমকি দিচ্ছিলেন। তৃণমূলের দাবি, সেই জন্যই এ দিন গুলি চালানো হয় তাঁর বাড়ির দিকে। তবে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের দাবি, টাকা পয়সা নিয়ে তৃণমূলের দ্বন্দ্বেই গুলি চলেছে। তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে।

মানিকচক ব্লকের এই গ্রামের পাশেই ফুলহার নদী। তার ওপাশে ঝাড়খণ্ড। এই ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করেছে। এ দিন ঘটনার পরে এলাকা থমথমে। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন